চারবার ট্রাম্পের ফোন, মোদি একবারও ধরেননি: জার্মান সংবাদমাধ্যমের দাবি

শুল্ক নিয়ে সাম্প্রতিক টানাপোড়েনের সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চারবার ফোন করেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে, কিন্তু একবারও ফোন ধরেননি মোদি। জার্মানির এক সংবাদপত্র সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে এ দাবি জানিয়েছে।

একই দাবি জানিয়েছে জাপানের এক সংবাদপত্রও। তারা বলেছে, প্রধানমন্ত্রী মোদি মার্কিন প্রেসিডেন্টকে এড়িয়ে চলছেন। এতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হতাশা খুবই বেড়ে গেছে।

দুই দেশের দুই সংবাদপত্রের এই দাবি কতটা সত্য, তা ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে গতকাল মঙ্গলবার জানতে চাওয়া হয়েছিল। ভারতীয় গণমাধ্যমের সেই প্রশ্নের কোনো জবাব পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেয়নি।

জার্মানির সংবাদপত্রের নাম ‘ফ্রাঙ্কফুর্টার অ্যালজেমেইন জেইটুঙ্গ (ফাজ)’। তারা জানিয়েছে, শুল্কযুদ্ধের আবহে মোদির সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন ট্রাম্প। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তিনি চারবার ফোন করেছিলেন, কিন্তু মোদি একবারও তাঁর ফোন ধরেননি। সংবাদপত্রটি এ কথা লিখে বলেছে, মোদির এ মনোভাব শুধু তাঁর ‘ক্রোধের গভীরতাই নয়, তিনি কতটা সতর্ক পদক্ষেপ নিচ্ছেন’, তা-ও বোঝাচ্ছে।

ফাজ লিখেছে, ভারতের কৃষি ও ডেইরি বাজার উন্মুক্ত করার জন্য ট্রাম্প প্রশাসন প্রবল চাপ দিচ্ছে। ফোন না ধরে মোদি তা প্রতিহত করতে চেয়েছেন। পাশাপাশি তিনি এটাও বোঝাতে চেয়েছেন, রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করতে ভারত রাজি নয়।

একই ধরনের খবর ছাপিয়েছে জাপানি সংবাদপত্র ‘নিক্কেই এশিয়া’। তারা বলেছে, ফোন না ধরে মোদি বুঝিয়েছেন, তিনি ট্রাম্পকে এড়িয়ে যেতে চাইছেন। এই আচরণ ট্রাম্পের হতাশা বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

দুই সংবাদপত্রই এই খবর জানিয়েছে সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে।

ফাজের প্রতিবেদনের কপি শেয়ার করে বার্লিনের গ্লোবাল পাবলিক পলিসি ইনস্টিটিউটের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক থর্স্টেন বেনার ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে লেখেন, ‘ফাজের দাবি অনুযায়ী, ট্রাম্প সাম্প্রতিক সময়ে মোদির সঙ্গে কথা বলতে চারবার ফোন করেছিলেন, কিন্তু মোদি ফোন প্রত্যাখ্যান করেছেন।’

গত ৩১ জুলাই ট্রাম্প বলেছিলেন, ভারত ও রাশিয়া কী করবে, তা নিয়ে তাঁর মাথাব্যথা নেই। দুজনে একসঙ্গে মৃত অর্থনীতিকে আরও টেনে নিচে নামাবে। এর জবাবে মোদি ১০ আগস্ট বলেছিলেন, ভারত খুব দ্রুত বিশ্বের তৃতীয় অর্থনীতি হওয়ার দিকে এগোচ্ছে।

পত্রিকাটি লিখেছে, ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক টো ল্যামের সঙ্গে ফোনালাপের পর ট্রাম্প দুই দেশের পক্ষেই গ্রহণযোগ্য বাণিজ্য চুক্তি সেরে ফেলেছিলেন। ঐকমত্য হওয়ার আগেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প সেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, কিন্তু সম্ভবত মোদি তেমন কিছু চাননি।

সংবাদপত্রটির মতে, শুল্কযুদ্ধের পরিণতিতে ভারতের বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার সাড়ে ৬ শতাংশ থেকে কমে সাড়ে ৫ শতাংশে দাঁড়াতে পারে।

ফাজ লিখেছে, নয়াদিল্লির মনোভাব বদলাচ্ছে। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে গত বৈঠকের পর থেকে মোদি ‘শ্রদ্ধাজনিত’ অনুভূতির কথা বলেছেন। চলতি মাসের শেষেই তিনি সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) শীর্ষ বৈঠকে যোগ দিতে চীন যাচ্ছেন। তাঁর এ সিদ্ধান্ত এই প্রশ্ন তুলেছে যে ট্রাম্পের নীতি ভারতকে আরও বেশি করে চীনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে কি না।

ফাজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই শুল্কযুদ্ধে ভারত যে মার্কিন চাপের কাছে মাথা নোয়াবে না, তা স্পষ্ট। মোদি যে অপমানিত হয়েছেন, তা পরিষ্কার। ফোন না ধরার মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের আচরণে মোদি কতটা বিরক্ত।

Share With Your Friends

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *