লোহার খাঁচার মধ্যে ছোট্ট একটি শিশু। গায়ে কোনো পোশাক নেই। কৌতূহল নিয়ে চারদিকে তাকাচ্ছে। তাকে দেখে হঠাৎ থমকে দাঁড়ালেন পথচারীরা। কেউ কেউ ছবি ও ভিডিও করতে শুরু করেন। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এরপর শিশুটির বাবা ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন।
ঘটনাটি ১৬ জুনের। ওই দিন চীনের হাইনান প্রদেশের একটি সড়কে লাল রঙের পিকআপ দাঁড় করানো ছিল। পিকআপের পেছনের খালি জায়গায় খাঁচার মধ্যে ওই শিশুকে দেখা যায়।
দৃশ্যটি দেখে এক ব্যক্তি শিশুটির ভিডিও করেন। ভিডিওতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘এই অবুঝ শিশুটির কী দুরবস্থা! মা–বাবা এত নিষ্ঠুর কীভাবে হতে পারেন? তীব্র রোদে সে পুড়ে যেতে পারে।’ শিশুটি পাচারকারীদের হাতে পড়তে পারে, এমন আশঙ্কায় পথচারীরা বিষয়টি পুলিশকে জানায়।
ঘটনার দুই দিন পর পুলিশ জানায়, পিকআপটি দিয়াও নামের এক ব্যক্তির। তিনি ওই শিশুর বাবা। তাঁর বাড়ি চীনের আরেক প্রদেশ হেনানে। তাঁর স্ত্রীর নাম ইয়াং। তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী। ওই দম্পতির ছয়টি সন্তান। দরিদ্র পরিবারটি ভ্যানেই বসবাস করে। ওই দিন তাঁরা কাজের খোঁজে নতুন কোথাও যাচ্ছিলেন।
দিয়াও বলেন, সেদিন পিকআপ দাঁড় করিয়ে একটি রেস্তোরাঁয় খেতে ঢুকেছিলেন। স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে নিতে পারেননি। তাদের পিকআপে রেখে যান। গরমের কারণে কয়েকটি শিশু পোশাক পরা ছিল না। তাঁর দাবি, লোহার খাঁচাগুলো দোকানের কাপড় রাখার কাজে ব্যবহার করা হয়। তিনি রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় খাঁচাগুলো দিয়ে পিকআপের পেছনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন, যাতে শিশুরা পড়ে না যায়। একপর্যায়ে একটি শিশু হামাগুড়ি দিয়ে খাঁচার ভেতরে ঢুকে পড়ে। তবে খাঁচাটি তালা দেওয়া ছিল না।
পুলিশ জানিয়েছে, তারা ওই পরিবারকে একটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে খুঁজে পেয়েছে। সেখানে তাদের শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।
নিংবো ইভিনিং নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিশুগুলো সুস্থ আছে। তাদের মা-বাবাও স্বাভাবিক আছেন। স্থানীয় দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা তাদের পোশাক, জুতা ও শিশুদের জন্য খেলনাসামগ্রী উপহার দিয়েছেন।
চীনজুড়ে এ ঘটনার অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। পুলিশ দিয়াওকে পিতার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে বলেছে। এ ছাড়া কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা নিতেও নিষেধ করেছে। বিষয়টি স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে। তারা পরিবারটিকে শিগগিরই হেনান প্রদেশে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করবে বলে জানিয়েছে।