অনলাইনে আম বিক্রি জমে উঠেছে, তরুণ উদ্যোক্তা বাড়ছে

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইট কিংবা মোবাইল অ্যাপ এসব মাধ্যমেই আম বিক্রিতে ঝোঁক বেড়েছে ব্যবসায়ীদের। তরুণেরাও এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। কেউ কেউ সরাসরি বাগান থেকে, আবার কেউবা আশপাশের বাজার কিংবা আম চাষিদের কাছ থেকে আম সংগ্রহ করে অনলাইনে বিক্রি করেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, দেশে ৫ হাজারের বেশি ছোট–বড় বিক্রেতা অনলাইনে আম ও বিভিন্ন মৌসুমি ফলের ব্যবসা করেন। তবে গ্রীষ্মকালীন আমের ব্যবসাই সবচেয়ে বড়। কারণ, অন্যান্য ফলের চেয়ে আমের চাহিদা বেশি থাকে।

অনলাইনে আম ব্যবসায়ীদের মধ্যে তরুণদের সংখ্যাই তুলনামূলক বেশি। তেমনই একজন চাঁপাইনবাবগঞ্জের রীদওয়ানুল আলম। বাবার ব্যবসায়ের হাল ধরার জন্য আট মাস আগে ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরি ছেড়ে দেন। এরপর নিজ এলাকায় চলে যান। বাবার ব্যবসা সামলানোর পাশাপাশি শখের বসে ফেসবুকে ‘আমবাজার-চাঁপাই’ নামের একটি পেজ খোলেন। ১৭ মে থেকে শুরু করেন ব্যবসা। এখন পর্যন্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জের বালিয়াডাঙ্গা, মহারাজপুর ও কাশিমপুর এলাকায় ৮০টি গাছের আম কিনেছেন। এখন পর্যন্ত ৪৬ মণ আম বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, ‘এ সময়ে অনলাইনে আমের চাহিদা বেশি থাকে। তাই বাবার ব্যবসার পাশাপাশি নিজেও কিছু করার পরিকল্পনা থেকে এই ব্যবসা শুরু করেছি।’

মূলত মে মাসের মাঝামাঝি থেকে আগস্ট পর্যন্ত চলে অনলাইনে আম বিক্রি। অনলাইনে বিক্রি হওয়া আম মূলত কুরিয়ার সার্ভিস বা বাসের মাধ্যমে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হয়। তখনয় ক্রেতারা কুরিয়ার সার্ভিসের কার্যালয়ে এসে আম নিয়ে যান। তবে কুরিয়ার সার্ভিসগুলো ক্রেতাদের ঠিকানায়ও আম পৌঁছে দেয়। সে ক্ষেত্রে অতিরিক্ত টাকা নেয় তারা।

এ বিষয়ে স্টেডফাস্ট কুরিয়ার সার্ভিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রিদওয়ানুল বারী প্রথম আলোকে বলেন, ‘কুরিয়ারে আম পরিবহনের বেশির ভাগই অনলাইনে বিক্রি হওয়া। আমাদের মাধ্যমে ১৫০ থেকে ২০০ জন আম ব্যবসায়ী দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আম পাঠান। এ বছর অনলাইনে বিক্রি করা আমের পরিবহন খরচ গত বছরের তুলনায় বেড়েছে। এখন পর্যন্ত শুধু সাতক্ষীরা থেকে ১৫০ টন আম আমাদের মাধ্যমে পরিবহন করা হয়েছে। রাজশাহী অঞ্চলের আমের পরিবহন শুরু হয়েছে গত সপ্তাহে। রাজশাহীর আম পরিবহন সাতক্ষীরার থেকে প্রায় তিন গুণ বেশি হবে।’

অ্যাপ ও ওয়েবসাইটে আম বিক্রি

ফেসবুকের পাশাপাশি অ্যাপ আর ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও আম বিক্রি হচ্ছে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান অনলাইনে আলাদা আলাদা দাম নির্ধারণ করে বিভিন্ন প্যাকেজ আকারে বিক্রি করছে। কিছু প্রতিষ্ঠান পাঁচ কেজি আকারের উপহার প্যাকেজও বিক্রি করছে। কেউ আবার আমের পাশাপাশি অন্যান্য মৌসুমি ফলও বিক্রি করেন।

প্রথম আলোর সঙ্গে কথা হয় ‘ফজলি ডট কম’ নামের ওয়েবসাইটের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আবদুল্লাহর সঙ্গে। তিনি প্রথম দিকে ফেসবুকের মাধ্যমে আম বিক্রি করতেন। ২০১২ সালে চালু করেন ওয়েবসাইট। তিনি জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে তাঁর ৪০ বিঘা আমের বাগান রয়েছে। তবে অনলাইনে চাহিদা মেটানোর জন্য রাজশাহী, রংপুর ও সাতক্ষীরা থেকে আম সংগ্রহ করতে হয়। গত বছর অনলাইনে প্রায় ৭০ হাজার কেজি আম বিক্রি করেছেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএতে অনার্স শেষে ২০১৩ সালে এমবিএ শেষ করেন হাসান তানভীর। প্রথম দিকে ‘রাজশাহী ম্যাঙ্গো’ নামে ফেসবুক পেজ খুলে আম বিক্রি শুরু করেন। সে বছর অনলাইন ও পরিচিত মানুষের কাছে ১ লাখ ২৮ হাজার টাকার আম বিক্রি করেন। তারপর ২০১৮ সালে পেমেন্ট গেটওয়ে তৈরি করে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আম বিক্রি শুরু করেন। ২০১৯ সালে তৈরি করেন মোবাইল অ্যাপ। হাসান তানভীর বলেন, ‘গত বছর অনলাইনে ৮০ হাজার কেজি আম বিক্রি করেছি। প্রতিবছর অনলাইনে আম বিক্রি ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হারে বাড়ছে।’

হাসান তানভীর আরও বলেন, অনলাইনে বিক্রি বাড়লেও প্রতিবছর অনলাইনে আম বিক্রির নামে প্রতারণার ঘটনাও ঘটে। অনেকেই নানাভাবে প্রতারণার শিকার হন। তা সত্ত্বেও অনলাইনে আম বিক্রি প্রতিবছরই বাড়ছে।

রাজধানীর বেইলি রোডের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী ফারিন আহমেদ বলেন, ‘প্রথমবার যখন অনলাইনে আম কিনেছি, সেবার প্রতারণার শিকার হয়েছি। তবে অনলাইনে আম কেনার জন্য বেশ কিছু ভালো প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অনলাইনে আম কিনলে হোম ডেলিভারি পাওয়া যায়। তাই অনলাইন থেকে আম কিনি।’

খুলনার বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছর এই বিভাগে ৭ হাজার ৮৯০ হেক্টর জমিতে আমের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার ৯১৪ মেট্রিক টন। আর রাজশাহীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে তথ্যমতে, এই বিভাগে চলতি বছরে আম চাষ হয়েছে ৯৩ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে। তাতে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১১ লাখ ৫ হাজার ৮৫৮ মেট্রিক টন। যার সম্ভাব্য বাজারমূল্য ধরা হয়েছে ৭ হাজার কোটি টাকা।

খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এই বিভাগে অনলাইনে আম বিক্রির ১৬টির বেশি প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ ছাড়া অনলাইনভিত্তিক ছোট–বড় ব্যবসায়ী রয়েছে পাঁচ শর বেশি। খুলনা বিভাগের মোট উৎপাদিত আমের ২০ শতাংশ অনলাইনে বিক্রি হয়।

Share With Your Friends

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *