৯ মাত্রার ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে দেশ, ভেঙে পড়বে রাজধানীর অর্ধেক ভবন

বাংলাদেশ ভয়াবহ ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে—এমন সতর্কবার্তা দিয়েছেন দেশি-বিদেশি ভূতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, ভারত ও মিয়ানমারের সক্রিয় ফল্টলাইনের সংযোগস্থলে অবস্থান করায় বাংলাদেশে ৯ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প ঘটতে পারে, যার ফলে রাজধানী ঢাকার অর্ধেক ভবন ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিলেট, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও ঢাকার ভূগর্ভে প্রচণ্ড চাপ জমে আছে। দীর্ঘদিন ধরে ভূমিকম্প না হওয়ায় এই চাপ হঠাৎ মুক্ত হলে ভয়াবহ কম্পন দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও ঢাকাকে ঘিরে সক্রিয় ফল্টলাইনের অবস্থান দেশের সবচেয়ে বিপজ্জনক ভূমিকম্প অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজমুল হোসেন বলেন, “৯ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকার প্রায় ৪৫ শতাংশ ভবন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পুরান ঢাকা, মিরপুর, গাবতলী ও বাড্ডা এলাকায় প্রাণহানির আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি।”

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) সূত্রে জানা গেছে, ঢাকায় প্রায় ২০ লাখ ভবনের মধ্যে অর্ধেকই গাইডলাইন না মেনে নির্মিত। ফলে বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে উদ্ধারকাজে বাধা সৃষ্টি হবে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়তে পারে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকার ইতোমধ্যে ৬৪ জেলায় ভূমিকম্প প্রস্তুতি কর্মসূচি চালু করেছে। ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে এবং রাজধানীতে উদ্ধার সক্ষমতা বাড়াতে নতুন সরঞ্জাম আনা হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এখনই ভবন পুনর্নির্মাণ ও জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুতির মতো কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে বিপর্যয় ঠেকানো কঠিন হবে।

আন্তর্জাতিক ভূকম্পন গবেষণা সংস্থা (IRIS) জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরের নিচে একটি বিশাল ভূতাত্ত্বিক প্লেটের গতিবিধি বাড়ছে, যা বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলজুড়ে চাপ সৃষ্টি করছে। এ চাপ মুক্ত হলে তা হতে পারে শতাব্দীর ভয়াবহতম প্রাকৃতিক দুর্যোগ।

সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জনগণকে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকতে হবে। সচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার করা হচ্ছে এবং জরুরি হেল্পলাইন সক্রিয় রাখা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের ভাষায়—“এখনই পদক্ষেপ না নিলে ঢাকার অর্ধেক ভবন হয়তো পরবর্তী ভূমিকম্পে ইতিহাস হয়ে যাবে।”

Share With Your Friends

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *