সীমিত পরিসরে চালু হচ্ছে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর’

চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ অবকাঠামো নিয়ে কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর’। এতে জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে ২০ জন। অস্থায়ীভাবে কার্যক্রম চলবে শাহবাগের জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন কার্যালয় থেকে। শিগ্গিরই নিয়োগ ও স্থায়ী অফিস ভবন নির্ধারণ প্রক্রিয়া শুরু হবে। নতুন এই অধিদপ্তরটির পুরো কার্যক্রম পরিচালিত হবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর গঠনপ্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। সোমাবার জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর গঠন করে গেজেট প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর গঠনে গুরুত্বারোপ করে সাংগঠনিক কাঠামোয় (অর্গানোগ্রাম) জানানো হয়, ‘মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তরের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এই গণ-অভ্যুত্থানে শহিদ ও আহত ছাত্র-জনতার তালিকা সংরক্ষণ এবং ডেটাবেজ রক্ষণাবেক্ষণ, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহিদ পরিবার ও আহত ছাত্র-জনতার কল্যাণসাধন করবে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহিদপরিবার ও আহত ছাত্র-জনতার গেজেট প্রকাশ, গণকবর সংরক্ষণ, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ইতিহাস ও স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য গবেষণা, নীতিমালা প্রণয়ন এবং এ সংক্রান্ত কার্যক্রম গ্রহণ করবে। প্রতিবছর ‘৫ই আগস্ট’ জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস হিসাবে উদ্যাপিত হবে।’ এছাড়া জুলাই গণ-অভ্যুত্থান সম্পর্কিত যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করবে এই অধিদপ্তর।

মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত অর্গানোগ্রামের মোট জনবল চাওয়া হয়েছিল ৬৩ জন। একটি অনুবিভাগ গঠনের প্রস্তাবও করা হয়েছিল। অনুবিভাগসহ বেশির ভাগ প্রস্তাব বাদ দিয়ে গঠন করা হয়েছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর। মাত্র ২০ জন জনবল দেওয়া হয়েছে। গাড়ি দেওয়া হয়েছে মাত্র ২টি। জনবল নিয়োগের চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপনে দেখা যায়, অধিদপ্তরের প্রধান হবেন অতিরিক্ত সচিব মর্যাদার একজন মহাপরিচালক। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদধারী হবেন উপসচিব মর্যাদার একজন পরিচালক, সিনিয়র সহকারী সচিব মানের একজন উপপরিচালক এবং সহকারী সচিব মানের দুইজন সহকারী পরিচালক থাকবেন অধিদপ্তরে। একটি পদ রাখা হয়েছে সহকারী প্রোগ্রামার হিসাবে। এছাড়া ১০ম গ্রেডের সহকারী হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা একজন, ১৩তম গ্রেডে কম্পিউটার অপারেটর ২ জন, ১৪তম গ্রেডের উচ্চমান সহকারী ২ জন, ১৬তম গ্রেডের অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে ৩ জন, ২০তম গ্রেডে অফিস সহায়ক পদে ৪ জন এবং গাড়িচালক পদে ২ জন নিয়ে কার্যক্রম শুরু করবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর। খুব শিগ্গিরই এসব পদে জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীরপ্রতীক বলেন, আমাদের প্রত্যাশিত জনবল কমানো হয়েছে। তবে শুরুটা হোক। এরপর প্রয়োজন মোতাবেক পরিধি বাড়ানো হবে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী মঙ্গলবার বলেন, বর্তমানে ২০ জন জনবল নিয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তরের কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

গত বছরের নভেম্বরে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে অধিদপ্তরের প্রক্রিয়া শুরুর অনুরোধ জানানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৮ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিস্তর আলোচনা শেষে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর গঠনে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়। এরপর ৬৩টি পদ ও ৮টি যানবাহন এবং ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অনুবিভাগ’-এর ২৭টি পদ ও ২টি যানবাহন সৃজনের প্রস্তাব করা হয়। ৭ জানুয়ারি দুটি পৃথক সাংগঠনিক কাঠামোর (অর্গানোগ্রাম) মাধ্যমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে জনবলের প্রস্তাব পাঠায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এর আগের দিন (৬ জানুয়ারি) মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের ‘অ্যালোকেশন অব বিজনেস’ সংশোধনের অনুমতি দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ১২ জানুয়ারি মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের পাঠানো জনবলের প্রস্তাব নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সেখানে প্রস্তাবিত ৬৩টি পদ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কাটছাঁট করে ৪১টি পদ ও ৮টি যানবাহন বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছে মন্ত্রণালয়টি। একইভাবে আকার ছোট করে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অনুবিভাগেও। প্রস্তাবিত ২৭টি পদের বিপরীতে অনুমোদন দেওয়া হয় ১৩টি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত তালিকা সংশোধন করে পুনরায় পাঠায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবনাটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। অর্থ মন্ত্রণালয় সামান্য কাটছাঁট করে তা মন্ত্রিপরিষদে পাঠায়। অনুবিভাগসহ অধিকাংশ প্রস্তাবনা বাদ দিয়ে মাত্র ২০ জন জনবল দিয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর গঠনে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

Share With Your Friends

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *