সিলেটে টাস্কফোর্সের অভিযান, আরও ৩৩টি পাথর ভাঙার মেশিনের বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন

অবৈধ পাথরের ব্যবসা ঠেকাতে সিলেট সদর উপজেলার ধোপাগুলে ৩৩টি ক্রাশার মেশিনের বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার টানা সাড়ে তিন ঘণ্টা টাস্কফোর্সের অভিযান চালিয়ে পাথর ভাঙার এসব মেশিনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এ নিয়ে গত দুই দিনে জেলার দুই উপজেলায় ৬৮টি মেশিনের বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলো।

স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, সদর উপজেলার সিলেট–কোম্পানীগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের ধোপাগুল এলাকায় সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত টাস্কফোর্সের অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযান পরিচালনা করেন সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খোশনূর রুবাইয়াৎ। এতে স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‍্যাব ও বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতিনিধিরা ছিলেন।

অভিযান–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আজ ৩৩টি ক্রাশার মেশিনের বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। এ সময় প্রায় সব কটি মেশিন চালানোর বৈদ্যুতিক মিটার খুলে জব্দ করা হয়েছে। কয়েকটি জায়গা তালাবদ্ধ থাকায় মিটার জব্দ করা না গেলেও সেসবের বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। অভিযানের বিষয়ে ইউএনও খোশনূর রুবাইয়াৎ বলেন, গতকাল সোমবার ক্রাশার মেশিনের বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কাজ শুরু হয়েছে। আজও তা অব্যাহত ছিল।

এর আগে গত শনিবার সকালে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) জাফলং এলাকা পরিদর্শনে যান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। জাফলং পরিদর্শন শেষে দুই উপদেষ্টা গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে জাফলংসহ সিলেটের কোনো পাথর কোয়ারি ভবিষ্যতে ইজারা দেওয়া হবে না বলে জানান। অন্যদিকে অবৈধ পাথরের ব্যবসা ঠেকাতে মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান দ্রুততার সঙ্গে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে থাকা ক্রাশার মেশিনের বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেন।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, দুই উপদেষ্টার নির্দেশনা পাওয়ার পরপরই প্রশাসন জেলায় কী পরিমাণ বৈধ ও অবৈধ ক্রাশার মেশিন রয়েছে, এর তালিকা তৈরির কাজ শুরু করে। আগামী বৃহস্পতিবার এ তালিকা তৈরির কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। পরে তালিকা ধরে ধরে সব কটি ক্রাশার মেশিনের বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। যদিও গতকাল সিলেট সদর উপজেলায় ৩০টি ও জৈন্তাপুর উপজেলায় পাঁচটি মেশিনে বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার মাধ্যমে বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণের প্রক্রিয়া এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে।

এদিকে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কোয়ারি থেকে পাথর ও বালু উত্তোলন বন্ধে নির্দেশনা দেয় সরকার। এর পর থেকে রাতের আঁধারে স্থানীয় কিছু আওয়ামী লীগ নেতার পৃষ্ঠপোষকতায় অবৈধভাবে পাথর ও বালু উত্তোলন চলত। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর কোয়ারির নিয়ন্ত্রণ নেন বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতারা। তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতায় হাজার হাজার পাথরশ্রমিক প্রকাশ্যে দেদার পাথর উত্তোলন শুরু করেন। এসব পাথর বারকি ও স্টিল নৌকায় ক্রাশার মেশিনমালিকদের কাছে বিক্রি করা হয়। পরে সেসব পাথর মেশিনে ভেঙে ছোট করে ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ করা হয়। ওই ব্যবসায়ীরা ট্রাক ও পিকআপে পাথর দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠান।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ আজ সন্ধ্যায় বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, জেলায় অন্তত এক হাজার ক্রাশার মেশিন আছে। পর্যায়ক্রমে সব কটি মেশিনের বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। গতকাল এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

Share With Your Friends

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *