সিপিএমের সমাবেশে সেলিম তৃণমূল ও বিজেপির স্ক্রিপ্ট এক, তা লেখা হয়েছে নাগপুরে

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস এবং কেন্দ্রে থাকা বিজেপিকে সাম্প্রদায়িক উসকানি দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন সিপিএমের রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেছেন, ‘তৃণমূল বিজেপির স্ক্রিপ্ট এক, তা লেখা হয়েছে নাগপুরে, লিখে দিয়েছেন মোহন ভাগবত।’

আজ রোববার বিকেলে কলকাতার ঐতিহাসিক ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে পশ্চিমবঙ্গের বাম দল সিপিএম–সমর্থিত চার গণসংগঠনের ডাকে আয়োজিত এক বিশাল সমাবেশে এ কথা বলেন সেলিম।

আজ ব্রিগেডে প্রচুর বাম কর্মী–সমর্থকের ভিড় হয়। সেই জনস্রোতের দিকে তাকিয়ে সেলিম বলেন, ‘যাঁরা দুরবিন দিয়ে লাল ঝান্ডা দেখতে পাচ্ছিল না, তাদের বুকে কাঁপন ধরাবে এই ব্রিগেড। কাজের জায়গা ছোট হয়ে যাচ্ছে। কেন্দ্র, রাজ্যে কোথাও নিয়োগ হচ্ছে না। যেখানে নিয়োগ হচ্ছে, সেখানে দুর্নীতির পাহাড়।’

ব্রিগেডে এই মহাসমাবেশের ডাক দেয় সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটু, প্রাদেশিক কৃষক সভা, ক্ষেতমজুর ইউনিয়ন এবং রাজ্যের বস্তি ফেডারেশন।

সমাবেশের প্রধান বক্তা ছিলেন সিপিএমের রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। আরও ভাষণ দেন সিটুর রাজ্য সম্পাদক অনাদি শাহু, প্রাদেশিক কৃষক সভার সম্পাদক অমল হালদার, ক্ষেতমজুর ইউনিয়নের সম্পাদক নিরাপদ সরদার, বস্তি উন্নয়ন পরিষদের সম্পাদক সুখরঞ্জন দে, আদিবাসী নেত্রী বন্যা টুডু প্রমুখ।

সমাবেশে মহম্মদ সেলিম বলেন, এই রাজ্যে আরএসএস এবং বিজেপিকে এনেছেন মমতা। মমতার দয়ায় এই রাজ্যে ঘর বেঁধেছে আরএসএস। এই মমতাই একদিন এই রাজ্যের লাল ঝান্ডার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছিল। সেই লাল ঝান্ডার এখনো বিদায় হয়নি। আজকের এই জনসমুদ্র প্রমাণ করে দিল লাল ঝান্ডার মৃত্যু নেই। লাল ঝান্ডা আবার জেগে উঠেছে।

মহম্মদ সেলিম আরও বলেন, সামনে দিন আসছে, সব চুরির হিসাব দিতে হবে। কেউ রেহাই পাবে না। চাকরি বিক্রি, কয়লা বিক্রি, রেশন চুরি, সব চুরির হিসাব দিতে হবে এই বাংলার জনগণকে। লাল সরকারকে হটিয়ে দেশ বাঁচানোর জন্য নেমেছিল। কিন্তু দেশ বাঁচাতে পারেনি। আজ দুর্নীতিতে ডুবে গেছে এই বাংলা। তাই তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, রাজ্যকে বাঁচানের লক্ষ্যে রাজ্যে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে হবে।

ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড ভরে যায় বাম কর্মী ও সমর্থকদের ভিড়ে

সেলিম বলেন, ‘আগামী ২৬ সালের এই রাজ্যের বিধানসভার নির্বাচনে এই লাল ঝান্ডাকে সমুন্নত রেখে আমাদের লড়তে হবে সাম্প্রদায়িকতা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে। মুর্শিদাবাদে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে সাম্প্রদায়িক অশান্তি, দাঙ্গা, আমরা বরদাশত করব না। এর বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। দাঙ্গাবাজদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে।’

মহম্মদ সেলিম দুঃখ করে বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ পর্যন্ত এই রাজ্যের কোনো দাঙ্গার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করেনি। কড়া ব্যবস্থাও নেয়নি। সেলিম বলেন, এই রাজ্যের পুলিশ যথার্থ ব্যবস্থা নেয় না। এ জন্য পুলিশ সংস্কার করতে হবে।

সেলিম বলেন, ‘আমাদের নেতা–নেত্রীরা বলিউড বা টালিউড থেকে আসেননি। তাঁরা মানুষের দাবি নিয়ে লড়াই করে এখানে পৌঁছেছেন। সেলিম সিপিএমের প্রয়াত নেতা ও রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর প্রসঙ্গ টেনে দাঙ্গা নিয়ে জ্যোতি বসুর একটি কথা নিয়ে বলেন, জ্যোতি বসু বলেছিলেন, ‘সরকার চাইলে দাঙ্গা হয়, সরকার না চাইলে দাঙ্গা হয় না।’

মহম্মদ সেলিম ঘোষণা দেন, আজ থেকে শুরু হয়ে গেল ২০২৬ সালের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের লড়াই। একই সঙ্গে তিনি আরও ঘোষণা দেন, আগামী ২০ মে ভারতজুড়ে পালিত হবে সাধারণ ধর্মঘট।

Share With Your Friends

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *