সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অজুহাত দেওয়ার ট্রেনিংপ্রাপ্ত বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। বুধবার সন্ধ্যায় কুমিল্লার দেবীদ্বার সদর এলাকায় কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের বিভাজক ও সড়ক প্রশস্তকরণ কাজে ‘অনিয়ম দেখার’ পর সাংবাদিকদের কাছে এ মন্তব্য করেন তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে হাসনাত আবদুল্লাহ তাঁর নিজ উপজেলার কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের দেবীদ্বার অংশের বিভাজক ও সড়কের দুই পাশে তিন ফুট করে প্রশস্তের কাজ দেখতে যান। সেখানে কাজে অনিয়ম ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ করেন তিনি।
কাজে অনিয়ম সম্পর্কে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ২ কোটি ৪৩ লাখ টাকার এই কাজ জনগণের কোনো কাজে আসবে না। বরং জনগণের আরও দুর্ভোগ বেড়েছে। কথা ছিল ডিভাইডার বসানোর আগে ছয় ইঞ্চি গাঁথুনি করবে, কিন্তু তারা তা করেনি। রাস্তার পিচের ওপরেই ডিভাইডার তোলা হয়েছে, যা ধাক্কা দিলেই পড়ে যাবে। এখানে ব্লক দেওয়ার কথা ছিল, তা দেয়নি। একটা রড থেকে আরেকটা রডের দূরত্ব থাকবে ৩০০ এমএম, কিন্তু তারা দূরত্ব দিয়েছে ৪০০ এমএম। যেখানে ১০০ রড লাগত, সেখানে তারা ৭০টি রড দিয়ে কাজ চালিয়ে দিয়েছে।
গত ২০ বছরে জবাবদিহিবিহীন একটা সমাজ গড়ে উঠেছিল উল্লেখ করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী যাঁরা আছেন তাঁরা হচ্ছেন যেকোনো এক্সকিউজ বা অজুহাত দেওয়ার ট্রেনিংপ্রাপ্ত। তাঁদের যেকোনো জিনিসের জন্য অজুহাত প্রস্তুত থাকে। এটা আমার দায়িত্ব ওর দায়িত্ব, এই চেয়ার, ওই চেয়ার আমার না, এটা আমার দায়িত্ব না—এমনটা আমাদের সঙ্গেও করে। আগে ১ কোটি টাকার কাজে ৩০ লাখ টাকাই খেয়ে ফেলা হতো, কোনো জবাবদিহি ছিল না। গত ২০ বছর এভাবে চলছে, জবাবদিহিবিহীন একটা সমাজ গড়ে উঠেছিল। যারা অনিয়ম করে তাদের কেউ কেউ এখনো ভাবছে যে তাদের কোনো জবাবদিহি করতে হবে না।’
হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, ‘আমরা যেহেতু কমিশন খাই না, সুতরাং আমরা কারও কাছে ধরা নেই। সুতরাং এ কাজের জন্য যে ২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে, তার যথাযথ প্রয়োগ হতে হবে।’
সেখানে উপস্থিত ঠিকাদার আশিকুর রহমান ভূঁইয়াকে উদ্দেশ করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘এই টাকা আমার বাপের টাকা না, আপনার বাপের টাকাও না, জনগণের টাকা। এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যাওয়া-আসা করে। তারা গালাগালি করে। ২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে, দরকার হলে আরও ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হতো, তবু এ কাজটা ঠিকভাবে করতেন। এই কাজে কেন অনিয়ম করলেন? ভাই গজব পড়বে! সওয়াবের নিয়তে কাজ করলে এমন করতে পারতেন না।’
পরে হাসনাত আবদুল্লাহ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও সওজের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন এবং দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেন।
কাজের অনিয়ম সম্পর্কে জানতে চাইলে মেসার্স ভূঁইয়া এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. আশিকুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ‘আমি যেভাবে ওয়ার্ক অর্ডার (কাজের আদেশ) পেয়েছি, সেভাবে করেছি। এখন মনে হচ্ছে আমার আরও ক্ষতি হবে। এরপরও যেভাবে ভালো হবে, ক্ষতিপূরণ দিয়ে হলেও কাজটা আমি শেষ করব।’