মেহেরপুরে জামাইয়ের ছুরিকাঘাতে চাচা শ্বশুর খুন

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামে জামাই সবুজের ছুরিকাঘাতে চাচা শ্বশুর ইলিয়াস হোসেন (৪৬) খুন হয়েছেন। একই ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হয়ে মেহেরপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন শ্যালক আব্দুল্লাহ।

নিহত ইলিয়াস হোসেন গাড়াবাড়িয়া গ্রামের স্কুল পাড়ার মৃত নেক্কার আলীর ছেলে এবং আব্দুল্লাহ একই গ্রামের মৃত আবুল বাশারের ছেলে। জামাই সবুজ একই উপজেলার ষোলটাকা গ্রামের ময়নাল হক মেম্বারের ছেলে।

বুধবার দিবাগত রাত চারটা থেকে বৃহস্পতিবার (৮ মে) ভোর পাঁচটার মাঝামাঝি কোন এক সময়ে গাড়াবাড়িয়া শ্বশুরালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

হত্যাকারী জামাই সবুজকে স্থানীয় জনতা উত্তম মধ্যম দিয়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে আটকে রাখে। পরে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। নিহতের মরদেহ বর্তমানে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

গাংনী থানা অফিসার ইনচার্জ বানী ইসরাইল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ঘটনার পরপরই পরিস্থিতি সামাল দিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেহেরপুর ইউনিটের একটি টিম, গাংনী থানা পুলিশের একাধিক টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। পরে মেহেরপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সার্কেল আব্দুল করিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

নিহতের স্ত্রী সালমা খাতুন জানান, প্রায় আট বছর পূর্বে সবুজের সাথে তার বিয়ে হয়। বিয়ের কিছু দিন পরে সে জানতে পারে সবুজ গোপনে নেশা করে এবং ইতোপূর্বে তার আরো একটি বিয়ে হয়েছিল। সবকিছু জানার পরেও ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ভেবে সে সংসার করে যায়। সংসার চলাকালীন সময়ে তাদের একটি ছেলে সন্তান জন্ম নেয়। যার নাম মুবিন (৫)। মুবিনকে এবছর লাইসিয়াম স্কুলে ভর্তি করে দেওয়া হয়েছে।

সালমা খাতুন আরোও জানায় প্রায় প্রতি রাতেই তার স্বামী সবুজ তিন তলার ছাদ থেকে নেশা করে গভীর রাতে ঘরে ঢুকে তার ওপর অত্যাচার করে এবং তাকে মেরে ফেলার জন্য উদ্ধত হয়। বিষয়টি তার শ্বশুর-শাশুড়িকে জানিয়েও কোনো ফল হয়নি। নিরুপায় হয়ে সে ১৫ দিন আগে মায়ের বাড়িতে চলে আসে। মায়ের বাড়িতে চলে আসলে তার স্বামী, শশুর- শাশুড়ি তার কোন খোঁজ খবর রাখে না। এমনকি ছেলেটার জন্য কোন কিছু পাঠায় না। এ অভিযোগও করে সালমা খাতুন।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে সালমা খাতুন আরোও জানান, বুধবার দিবাগত রাত আনুমানিক চারটা থেকে সাড়ে চারটার মত হবে দরজায় সালমা নাম ধরে ডাকতে শুনি। ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার স্বামী সবুজ আমাকে ঘর খোলার জন্য সালমা সালমা করে ডাকছে। আমি ঘর খুলি নাই। পরে আমার ভাই আব্দুল্লাহর ঘরের দরজায় ধাক্কা দিতেই ঘর খুলে দেয়। সে আব্দুল্লাহর ঘর হয়ে আমার সোবার ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে। আমার কাছে এক গ্লাস পানি চাই। আমি পানি নিতে বাইরে যেতে চাইলে সে আমাকে বাইরে যেতে বারণ করে। আমি ঘর না খোলায় আমাকে মারার জন্য উদ্ধত হয়। আমার চাচা ঠেকাতে আসলে সে প্যান্টের পিছন থেকে ছুরি বের করে চাচার পেটে বেশ কয়েকটি আঘাত করে। চাচা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। আমার ভাই আব্দুল্লাহ তাকে নিবৃত করার চেষ্টা করলে তাকেও ছুরিকাঘাত করে জখম করে। আশেপাশের লোকজন এসে তাকে উত্তম মধ্যম দিয়ে বেঁধে ঘরের মধ্যে আটকে রাখে পুলিশে খবর দেয়। গুরুতর আহতাবস্থায় চাচা ও ভাইকে উদ্ধার করে মেহেরপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক আমার চাচা ইলিয়াস হোসেনকে মৃত ঘোষণা করেন। ভাই আব্দুল্লাহ বর্তমানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে।সালমা খাতুন তার চাচার হত্যাকারী ও তার ভাইয়ের জখমকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

অপরদিকে, সবুজকে উদ্ধার করে পুলিশি প্রহরায় গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

গাংনী থানা অফিসার ইনচার্জ বানী ইসরাইল জানান, পুলিশের একাধিক টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। মরদেহ মেহেরপুর মর্গে পাঠানোর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। হত্যাকারীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে পরে বিস্তারিত জানানো হবে।

এস কে সামিউল ইসলাম, মেহেরপুর প্রতিনিধি

Share With Your Friends

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *