ফেব্রুয়ারি ও এপ্রিল সামনে রেখে ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ বা সম্ভাব্য সময় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীনের বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়নি। তবে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি ও এপ্রিল—এ দুটি ‘টাইমফ্রেম’ বা সময়সীমা সামনে রেখে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। স্থানীয় সরকার নয়, সংসদ নির্বাচন ঘিরে পুরোদমে প্রস্তুতি নিচ্ছে সাংবিধানিক এই সংস্থা।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান সিইসি নাসির উদ্দীন। তিনি গত বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছিলেন। তবে ওই সাক্ষাতে কী আলোচনা হয়েছে, তা নিয়ে এত দিন আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য আসেনি।

সাক্ষাতের পর শুক্র ও শনিবার ছিল সাপ্তাহিক ছুটি। এরপর শারীরিক অসুস্থতার কারণে গত রবি ও সোমবার নিজ কার্যালয়ে আসেননি সিইসি। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের পর গতকাল প্রথম অফিস করেন সিইসি। বিকেলে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৃহস্পতিবারের সাক্ষাৎ ছিল মূলত সৌজন্য সাক্ষাৎ। কোনো ‘এজেন্ডা’ (আলোচ্যসূচি) নিয়ে বৈঠক হয়নি। তবে এই মুহূর্তে নির্বাচন আলোচনার কেন্দ্রে, সৌজন্য সাক্ষাতে ‘সাইড টক’ হিসেবে কিছু বিষয় আসে। প্রধান উপদেষ্টা একটি অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে চান। প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। তিনি (সিইসি) প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছেন, ইসি ‘ফুল গিয়ারে’ (পুরো দমে) প্রস্তুতি নিচ্ছে। নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যেই ইসি প্রস্তুতি নিচ্ছে।

নির্বাচনের তারিখ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি জানিয়ে সিইসি বলেন, নির্বাচনের তারিখ এবং তফসিল যথাসময়ে জানাবে ইসি। এ জন্য একটু অপেক্ষা করতে হবে। তিনি জানান, সাধারণত নির্বাচনের মাস দুয়েক আগে তফসিল ঘোষণা করা হয়।

এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতে তিনি বুঝতে পেরেছেন, একটি ডেমোক্রেটিক ট্রানজিশন (গণতান্ত্রিক উত্তরণ) এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার আন্তরিকতা প্রশ্নাতীত।

গত ৬ জুন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যেকোনো একটি দিনে অনুষ্ঠিত হবে। এই ঘোষণার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন উপযুক্ত সময়ে নির্বাচনের বিস্তারিত রোডম্যাপ দেবে।

তবে এরপর প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাজ্য সফরে গেলে তাঁর সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ১৩ জুন লন্ডনে ওই বৈঠকের পর একটি যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, সব প্রস্তুতি শেষ করা গেলে ২০২৬ সালে পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও (ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে) নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে।

ওই বিবৃতির পর নির্বাচন কমিশন বলেছিল, তারা এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো কিছু জানে না। সরকারের সঙ্গে আলোচনা হলে মনোভাব বোঝা যাবে। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি নাসির উদ্দীন বলেন, সম্ভাব্য সময় নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তাঁর কোনো কথা হয়নি।

সিইসি বলেন, ‘সম্ভাব্য সময়ের বিষয়ে আপনারা যেটুকু জানেন, আমিও ততটুকু জানি। তখন প্রথমে উনি (প্রধান উপদেষ্টা) বলেছিলেন যে এপ্রিলের ফার্স্ট হাফে। তাররে তো বক্তব্য আপনারা শুনেছেন। আমি আজকে আবার দেখলাম…মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে উনি ফোন করেছেন, ওখানে নাকি বলেছেন যে আগামী বছরের প্রথম দিকে, এ রকম, আমি জানি না।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, লন্ডনে ফেব্রুয়ারির কথা এসেছে, এর আগে এপ্রিলের কথা এসেছে। এ দুটো টাইমফ্রেমকে (সময়সীমা) সামনে রেখে ইসি প্রস্তুতি নিচ্ছে।

জাতীয় সংসদের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দেওয়ার দাবি আছে কোনো কোনো দলের। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি জানান, এই মুহূর্তে ইসির প্রস্তুতি জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নয়। প্রধান উপদেষ্টা দেশে–বিদেশে জাতীয় নির্বাচনের কথাই বলছেন। তবে যদি স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে হয়, তাহলে এই প্রস্তুতি সেখানেও কাজে লাগবে।

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ইসি পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, রাজনৈতিক দল বক্তব্য দিতে পারে। এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না।

একটি গণমাধ্যমে খবর এসেছে যে প্রধান উপদেষ্টা সিইসিকে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের বার্তা দিয়েছেন। এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, এ ধরনের কোনো বার্তা দেওয়া হয়নি। কেন এমন বার্তা দেওয়া হবে—প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, তাঁরা জোর করে এসে চেয়ারে বসে গেছেন, বিষয়টা তেমন নয়। ৫ আগস্টের পর যথাযথ, স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বর্তমান কমিশনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই কমিশন আগস্ট বিপ্লবের পরের ফসল।

নির্বাচন কমিশনে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত আছে। সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা বিদেশে একটি গণমাধ্যমকে বলেছেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনের বিষয়টি ইসির ওপর নির্ভর করছে। এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘আমার কোনো মন্তব্য নাই। আপনার এই প্রশ্ন ওনার অফিসকে করতে পারেন।’

Share With Your Friends

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *