প্রথম টাই, প্রথম সুপার ওভার, এরপর বাংলাদেশের হার

কালো মাটির উইকেট, সাপের মতো বাঁক খাওয়ানো বল, ওয়েস্ট ইন্ডিজের শুধু স্পিনারদের দিয়েই পুরো ৫০ ওভার করানোর রেকর্ডের পর শেষ ওভারের রোমাঞ্চ—ম্যাচটাকে মনে রাখার জন্য এটুকুই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু কে জানত, বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় ওয়ানডের শেষটাতে লেখা ছিল আরও এক পরত নাটকীয়তা! সব ভুলিয়ে দিন শেষে ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারিত হবে তাতেই।

৫০ ওভার শেষে ম্যাচ টাই, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম সুপার ওভারের মুখোমুখি বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত মাঠ ছাড়ল হারের দীর্ঘশ্বাস নিয়ে। সুপার ওভারে অধিনায়ক শাই হোপের ৩ বলে ৭ রানের সৌজন্যে ১ উইকেটে ১০ রান করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশ সৌম্য সরকারের উইকেট হারিয়ে করে ৯ রান। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, দুটি নো, একটি ওয়াইড ও একটি লেগ বাই থেকে অতিরিক্ত ৪ রান এবং ৩টি বাড়তি বল পেয়েও বাংলাদেশ ১০ রানের লক্ষ্য পেরোতে পারেনি। সুপার ওভারে নাজমুল হোসেনকে তিনে নামানোটাও অবশ্য কম বিস্ময়ের ছিল না। ওয়েস্ট ইন্ডিজের নাটকীয় জয়ে সিরিজে এখন ১-১ সমতা। আগামীকালের শেষ ম্যাচটি হয়ে দাঁড়িয়েছে অলিখিত ফাইনাল।

দিন শেষে ফলাফলটাই আসল। তার ওপর সেটির নিষ্পত্তি যদি হয় এমন রোমাঞ্চকরভাবে, জয়-পরাজয় দুটোর অনুভূতিতেই ভর করে আবেগ। পরশু গভীর রাতে ঢাকায় পৌঁছে কাল দুপুরেই ম্যাচ খেলতে নামা আকিল হোসেনকে তাই ম্যাচ শেষে সতীর্থ প্রায় সবাই আলিঙ্গনে জড়ালেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে বাংলাদেশকে জয়বঞ্চিত করা সুপার ওভারটা যে করেছিলেন তিনিই! বাংলাদেশের ডাগআউট তখন শোকস্তব্ধ। এমন ম্যাচও যে এভাবে হারা যায়, সেটা যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না ক্রিকেটারদেরই।

নিজেদের ৩৯ বছর ও ৮১৪ ম্যাচের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতহাসে প্রথম টাই করল বাংলাদেশ।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়ের অন্যতম নায়ক আকিল হোসেন

শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের স্পিনবান্ধব কালো মাটির উইকেট নিয়ে সিরিজের শুরু থেকেই তুমুল আলোচনা। প্রথম ম্যাচে স্পিনারদের তাণ্ডব দেখে কাল আরও বেশি স্পিননির্ভর একাদশ গড়ে দুই দল। অবশ্য ম্যাচের আগে দূর থেকে মনে হচ্ছিল, আগের দিনের তুলনায় উইকেট কিছুটা শুষ্ক, অতটা স্পিন–সহায়কও হয়তো হবে না। কিন্তু খেলা যত গড়াল, ততই ‘মরণফাঁদ’ হয়ে দেখা দিল উইকেট।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৫০ ওভারই স্পিনারদের দিয়ে করানো ওয়ানডে ক্রিকেটে এখন নতুন রেকর্ড। এ রকম কিছু যে হবে, সেটি টসে হেরে আগে ফিল্ডিং করতে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড় তালিকা দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। বিশেষজ্ঞ স্পিনার চারজন, পেসার একজনও নয়। বাংলাদেশ দলে অবশ্য একজন পেসার ছিলেন, মোস্তাফিজুর রহমান, ৮ ওভারে ৪০ রানে উইকেটশূন্য থেকে যিনি পরে সুপার ওভারটিও করেছেন।

নুরুল হাসানের সেই ক্যাচ মিস। এই ক্যাচটি নিতে পারলে বাংলাদেশ জিতে যেত

তাসকিন আহমেদকে বসিয়ে স্পিনশক্তি বাড়াতে দলে নেওয়া হয়েছিল বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদকে। নতুন বলে দলের বোলিং শুরু করেন প্রথম ওভারের তৃতীয় বলেই ক্যারিবীয় ওপেনার ব্রেন্ডন কিংকে এলবিডব্লু করেন তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংসের বাকি গল্পও বাংলাদেশের স্পিনারদের হাতেই লেখা হচ্ছিল। কিন্তু ১৩৩ রানে ৭ উইকেট হারানোর পরও ক্যারিবীয়রা এমনভাবেই ঘুরে দাঁড়াল যে ৫০ ওভার শেষ করল ম্যাচ টাই করে। শেষ ওভারে দরকার ছিল ৫ রান। সাইফ হাসান পঞ্চম বলে আকিলকে ফেরালেও শেষ বলে ২ রান নিয়ে বাংলাদেশকে ধরে ফেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শেষ বলটায় খারি পিয়েরের তোলা ক্যাচটি নুরুল হাসান নিতে পারলে অবশ্য বাংলাদেশ জিতেই যেত।

অবশ্য তার আগের ওভারেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের ১২ বলে ১৪ রানের লক্ষ্য অনেকটা কমিয়ে দেন মোস্তাফিজ। তাঁর করা ৪৯তম ওভার থেকেই আসে ৯ রান। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটিংয়ের ডানহাতি-বাঁহাতি কম্বিনেশন মাথায় রেখে বোলিং করাতে গিয়ে অধিনায়ক মিরাজ দলের তিন বিশেষজ্ঞ স্পিনারের বোলিং কোটা শেষ করে ফেলেন তার আগেই।

ম্যাচ টাই করায় বড় অবদান হোপের ৬৭ বলে অপরাজিত ৫৩ রানের, সঙ্গে ছিল জাস্টিন গ্রিভস (৩৯ বলে ২৬) আর আকিলের (১৭ বলে ১৬) দারুণ সংগত। নিশ্চিত জিততে থাকা ম্যাচটা বাংলাদেশের হাত থেকে ছিনিয়ে নেয় আসলে তাদের অষ্টম উইকেটে ৪৪ ও নবম উইকেটে ৩৪ রানের দুটো জুটি।

এই ম্যাচেও বাংলাদেশের সেরা পারফর্মার রিশাদ হোসেন

দুই ইনিংসের প্রায় প্রতিটি বলেই দেখা গেছে টার্ন, হঠাৎ বাউন্স, কখনো নিচু বল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্পিনারদের শর্ট বলগুলোও নিচ্ছিল বড় টার্ন। একবার তো ডাউন দ্য উইকেটে মারতে গিয়ে টার্ন করে বেরিয়ে যাওয়া বল নাগালে না পেয়ে শট না খেলেই পড়িমরি করে পপিং ক্রিজে ঝাঁপিয়ে পড়ে স্টাম্পিং হওয়া থেকে বাঁচেন মিরাজ। তবে স্পিন–নৃত্যে নাকাল বাংলাদেশে ১২৮ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলার পরও মনে হচ্ছিল, জয়ের রান তো হয়েই যাচ্ছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানরাও কি পারবেন এই উইকেটে খেলতে!

Share With Your Friends

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *