পাকিস্তানকে টি–টোয়েন্টি শিখিয়ে মহারণ জিতল ভারত

সেই একই পটভূমি, সেই একই চিত্রনাট্য! ওয়ানডে বিশ্বকাপ, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়নস ট্রফি বা এশিয়া কাপ—টুর্নামেন্টের নাম যেটাই হোক, মঞ্চটা বড় হলেই হলো; ভারতের কাছে পাকিস্তান পাত্তা পাবে না। এটাই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে অনেক দিন থেকে। এবারের এশিয়া কাপে গতকালের ম্যাচটিতেও সেটাই হলো। পটভূমি যখন বড় মঞ্চের ম্যাচ, একই চিত্রনাট্য মেনে ভারতের কাছে আরও একবার উড়ে গেল পাকিস্তান।

টসে জিতে ব্যাটিংয়ে পেস বা স্পিন, ভারতের বোলিংয়ের সামনে হাঁসফাঁস করতে করতে ২০ ওভারের মধ্যে অলআউট না হলেও ৯ উইকেটে করতে পেরেছে মাত্র ১২৭ রান। পাকিস্তানের এই রান ভারত পেরিয়ে গেছে ২৫ বল হাতে রেখে, মাত্র ৩ উইকেট হারিয়ে। ৭ উইকেটের জয়টি এবারের এশিয়া কাপে ভারতের দ্বিতীয়। প্রথম ম্যাচে তারা উড়িয়ে দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে। ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে গতকাল পর্যন্ত পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে বিশ্বকাপ, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ও এশিয়া কাপ মিলিয়ে টানা ৬ ম্যাচে জিতল ভারত।

পাকিস্তানের ওপর ভারত ছড়ি ঘোরাতে শুরু করে ম্যাচের প্রথম ওভার থেকেই। টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নামা পাকিস্তানের ওপেনার সাইম আইয়ুবকে হার্দিক পান্ডিয়া প্রথম যে বলটি ছাড়েন, সেটি ছিল ওয়াইড। আর পরের বলটি, অর্থাৎ ম্যাচের প্রথম বৈধ যে বলটি করলেন, সেটিতেই আউট হয়ে গেলেন আইয়ুব। ক্রিজে জায়গা করে নিয়ে নিরীহ–দর্শন লেংথ বলটি পয়েন্ট অঞ্চল দিয়ে সীমানাছাড়া করতে চেয়েছিলেন পাকিস্তানের ওপেনার। কিন্তু সেই অঞ্চলে কড়া পাহারায় থাকা যশপ্রীত বুমরা তাঁর হাত গলে বলটি ওপারে যেতে দেননি। সহজ ক্যাচে আইয়ুবকে ক্রিজছাড়া করেন বুমরা।

সাইম আইয়ুবকে ফিরিয়ে ভারতকে প্রথম উইকেট এনে দিয়েছেন হার্দিক পান্ডিয়া

দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশের ম্যাচের গতিপ্রকৃতি এগিয়েছে ইনিংসের প্রথম বৈধ বলটির দেখিয়ে দেওয়া পথ ধরেই। বড় কোনো টুর্নামেন্টে যেমন হয়—ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ মানেই পাকিস্তানের কোনো না কোনোভাবে হুড়মুড় করে ভেঙে পড়া, সেই রীতি মেনে গতকালও হুড়মুড় করে ভেঙে পড়েছে সালমান আগার দল।

ভারতের দ্বিতীয় ওভারটি করতে আসেন যশপ্রীত বুমরা। পান্ডিয়াকে উইকেট পেতে ক্যাচ নিয়ে সাহায্য করেছিলেন। এবার তাঁর উইকেট পাওয়ায় অবদান রাখলেন পান্ডিয়া। বুমরার ওভারের দ্বিতীয় বলটি তেমন ভয়ংকর কিছু ছিল না। চতুর্থ স্টাম্প বরাবর লেংথ বল। কিন্তু মোহাম্মদ হারিস বুমরাকে আক্রমণ করে খেলতে চেয়েছিলেন। হাঁটুর খানিক ওপরে ওঠা বলটি খেলতে গিয়ে টাইমিংয়ে গড়বড় করে ফেলেন হারিস। বল উঠে যায় ওপরে, ফাইন লেগ থেকে দৌড়ে এসে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড-স্কয়ার লেগে ক্যাচ নিয়ে হারিসকে ফেরান পান্ডিয়া।

৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা ভারতের কুলদীপ যাদব

৬ রানে ২ উইকেট হারানো পাকিস্তান এরপর ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে সাহিবজাদা ফারহান ও ফখর জামানের ব্যাটে। কিন্তু পান্ডিয়া ও বুমরার পর পাকিস্তানকে চেপে ধরেন ভারতের স্পিনাররাও। তাই রানের চাকা সেভাবে ঘোরাতে পারছিলেন না দুজনের কেউই। কিছুটা থিতু হয়ে সেদিকে মনোযোগ দিতে গিয়েই আউট হয়ে ফেরেন ফখর। উইকেট থেকে বেরিয়ে এসে ছয় মারতে গিয়ে লং অনে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি অক্ষর প্যাটেলের বলে।

৪৫ রানে তৃতীয় উইকেট হারানো পাকিস্তান এরপর দ্রুতই ভেঙে পড়ে। অধিনায়ক সালমান আগা অক্ষরের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফেরেন। মাত্র ১৮ রানে ৩ উইকেট নেওয়া কুলদীপ যাদব এরপর একে একে ফেরান হাসান নেওয়াজ, মোহাম্মদ নেওয়াজ ও ফারহানকে। দুটি করে উইকেট নিয়েছেন বুমরা ও অক্ষর। ৪৪ বলে ৪০ রান করে আউট হওয়ার আগে অনন্য এক কীর্তি গড়েন ফারহান। নিজের ইনিংসের তিন ছক্কার দুটিই তিনি মেরেছেন বুমরাকে। পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ফারহানই প্রথম তিন সংস্করণ মিলিয়ে বুমরাকে ছক্কা মারার রেকর্ড গড়লেন। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এক ম্যাচে বুমরাকে দুটি ছক্কা মারতে পারা ছয় ব্যাটসম্যানের একজনও তিনি।

মাঠে পাকিস্তানিদের হতাশার একটি দিন উপহার দিয়েছে ভারত

এই ম্যাচ থেকে পাকিস্তানের মনে রাখার মতো ঘটনা তো ফারহানের এই কীর্তিটুকুই! টি-টোয়েন্টিতে ১২৮ রান তাড়া করা ভারতের এ দলটির কাছে যে কিছুই না, সেটা তারা ইনিংসের শুরু থেকেই দেখাতে শুরু করে। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারের মধ্যে ২ উইকেট হারিয়ে ফেললেও তুলে নেয় ৬১ রান। তৃতীয় উইকেটে অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব ও তিলক বর্মার ৫৬ রানের জুটিতে জয়ের প্রান্তে পৌঁছে যায় ভারত। তিলকের আউটের পর আর কোনো উইকেট পড়তে না দিয়ে পাকিস্তানকে পেরিয়ে যায় তারা।

সূর্যকুমার ও তিলক যখন ব্যাটিং করছিলেন, ধারাভাষ্যকক্ষে পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার বাজিদ খান বলছিলেন, ‘ভারত দেখাচ্ছে, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটটা কীভাবে খেলতে হয়!’ আসলেই তো তা-ই!

ভারতের জয়ের পর শিবম দুবের সঙ্গে সূর্যকুমার যাদব

সংক্ষিপ্ত স্কোর

পাকিস্তান: ২০ ওভারে ১২৭/৯ (ফারহান ৪০, আফ্রিদি ৩৩*, ফখর ১৭; কুলদীপ ৩/১৮, অক্ষর ২/১৮, বুমরা ২/২৮)।
ভারত: ১৫.৫ ওভারে ১৩১/৩ (সূর্যকুমার ৪৭*, অভিষেক ৩১, তিলক ৩১; সাইম ৩/৩৫)।
ফল: ভারত ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: কুলদীপ যাদব

Share With Your Friends

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *