দিল্লির ঘুম কেড়ে নিচ্ছেন ড. ইউনূস? কূটনৈতিক চালে নাজেহাল মোদি সরকার

দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে নতুন শক্তি হিসেবে নিজের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে বাংলাদেশ ।  ভারতের পুরনো মিত্র সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লজ্জাজনক পতনের পর রাজনৈতিক পালা বদলে রীতিমত বিপদে নয়া দিল্লি।  কাজে আসছে না বিশ্বস্ত প্রতিবেশী তত্ত্ব কিংবা নতজানু হয়ে থাকার রীতি।  দেড় দশক পর পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথে হাঁটছে বাংলাদেশ।

 তবে শর্তহীন নয় ঢাকার স্পষ্ট দাবি 1971 সালের যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার জন্য ক্ষমা চাইতে হবে।  দিতে হবে ক্ষতিপূরণ । ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের এসব কৌশলী পদক্ষেপ ইঙ্গিত দিচ্ছে এখন আর নিয়ন্ত্রণ নয় বাংলাদেশকে দিতে হবে যথাযথ সম্মান।  গত এক দশক ধরে বাংলাদেশকে নিজেদের ন্যাচারাল এলাই বা সহজাত প্রতিবেশী হিসেবে দেখে আসছে ভারত।

 সীমান্ত চুক্তি ,নিরাপত্তা সহযোগিতা , ট্রানজিট সবকিছুতেই আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করেছে ভারতের পক্ষে।  বরাবরই প্রাধান্য পেয়েছে নয়া দিল্লির স্বার্থ । কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও বহুজাতিক পররাষ্ট্রনীতির দিকে পরিচালিত হচ্ছে বাংলাদেশ।  এখন ভারতী ঢাকার একমাত্র মিত্র নয়।

 বরং সমান গুরুত্ব পাচ্ছে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব ,রাশিয়া সহ অন্যান্য রাষ্ট্র । আন্তর্জাতিক অঙ্গনে  মর্যাদাপূর্ণ সম্পর্ক তৈরিতে বেড়েছে সরকারি তৎপরতা।  পাকিস্তানের সঙ্গে কৌশলগত ঘনিষ্ঠতা এবং চীনের সাথে সামরিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়ন আগের চাইতে বাড়াচ্ছে ভারতের অস্বস্তি।

 প্রতিরক্ষা খাতে বেইজিং ও ঢাকার যৌথ সম্পর্ক যে স্তরে পৌঁছেছে এটিকে এক ধরনের রিজিওনাল পাওয়ার শিফট বা আঞ্চলিক ক্ষমতার বলয় বদলে যাওয়া বলে মনে করছেন ভারতীয় গোয়েন্দা বিশ্লেষকরা।

 স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট এর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের 70 শতাংশ সামরিক সরঞ্জাম আসে চীন থেকে।  এ পর্যন্ত দেশে আসা একাধিক রাডার সিস্টেম, যুদ্ধজাহাজ, মিসাইল, উন্নত প্রযুক্তি ও চীনা  সমরাস্ত্র দিল্লির জন্য হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কৌশলগত উদ্বেগের কারণ।  শুধুমাত্র চীন কিংবা পাকিস্তান নয়,  বাংলাদেশকে কৌশলগত মিত্র হিসেবে বিবেচনা করছে সৌদি আরব ,রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র ।

ইন্ডিয়ান ওশেন সিকিউরিটি পার্টনার হিসেবে ঢাকাকে দেখতে চায় ওয়াশিংটন ও রিয়াদ। মার্কিন ইন্দোপ্যাসিফিক প্ল্যানে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ও সৌদি আরবের অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠা ভারতের জন্য হতে পারে বড় চ্যালেঞ্জ ।

কারণ এসব ক্ষেত্রে একচেটিয়া সুবিধা পেয়ে আসছিল নয়া দিল্লি । সীমান্ত রাজনীতি ,এনআরসি ,সিএএ ও তিস্তা চুক্তির মতো নানা কারণে বাংলাদেশে তীব্র হচ্ছে ভারতবিরোধী মনোভাব । এমন বৈরি পরিস্থিতিতে দিল্লির চিরশত্রু ইসলামাবাদের সঙ্গে ঢাকার ঘনিষ্ঠতা ভারতের কাঁটা ঘায়ে দিচ্ছে নুনের ছিটে।  অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে ডক্টর ইউনুস খুব হিসেব করে দিচ্ছেন কূটনীতির প্রতিটি চাল।

 অর্থনৈতিকভাবে ভারতের চেয়ে ছোট হলেও কৌশলগত দিক থেকে এক ধরনের আঞ্চলিক হাব হয়ে উঠছে বাংলাদেশ । ক্ষমা চেয়ে ও ক্ষতিপূরণ দিয়ে হলেও সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহ দেখাচ্ছে পাকিস্তান । অন্তর্বর্তী সরকারের বহুপাক্ষিক কূটনীতির ফলে তৈরি হচ্ছে ভারত মহাসাগর ,চীন ও মধ্য এশিয়া আর পশ্চিমা সামরিক জোটগুলোর সঙ্গে সংযোগ বৃদ্ধির নতুন নতুন সম্ভাবনা।

 বর্তমান পরিস্থিতি মনে করিয়ে দিচ্ছে  দক্ষিণ এশিয়ায় শেষ হতে চলেছে ভারতের একচেটিয়া প্রভাব । তবে এর ফায়দা ঘরে তুলতে হলে বাংলাদেশকে থাকতে হবে সদা সতর্ক ।

Share With Your Friends

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *