তহবিলসংকটের কারণে এক-চতুর্থাংশ শান্তিরক্ষী কমাচ্ছে জাতিসংঘ

বিশ্বের নয়টি অঞ্চলের শান্তি রক্ষা মিশন থেকে এক-চতুর্থাংশ শান্তিরক্ষী বাহিনী কমিয়ে আনতে যাচ্ছে জাতিসংঘ। যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা কমে যাওয়ায় তহবিলঘাটতির কারণে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতিসংঘের ওই কর্মকর্তা বলেন, তহবিল কমানোর ফলে ১৩ থেকে ১৪ হাজার সামরিক ও পুলিশ সদস্যকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে। এ ছাড়া মিশনে কর্মরত বিপুলসংখ্যক বেসামরিক কর্মীর ওপর এর প্রভাব পড়বে।

জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর সেনাসদস্য ও পুলিশ শান্তিরক্ষী মিশনে কাজ করেন। জাতিসংঘের এই মিশনে শান্তিরক্ষী পাঠানোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। গত ৩১ আগস্টের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে ১০ দেশে শান্তিরক্ষী হিসেবে ৪৪৪ নারীসহ ৫ হাজার ৬৯৬ বাংলাদেশি দায়িত্ব পালন করছেন।

২০২৫-২৬ সালে জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনের মোট বাজেট ছিল ৫৪০ কোটি ডলার। এর মধ্যে অনুদান হিসেবে ১৩০ কোটি ডলার দেওয়ার কথা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এখন জাতিসংঘকে জানিয়েছে, তারা বাজেটের অর্ধেক, অর্থাৎ প্রায় ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার দেবে। এর মধ্যে ৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার বরাদ্দ থাকবে হাইতির অ্যান্টি-গ্যাং মিশনের জন্য; যা জাতিসংঘের বাজেটে অন্তর্ভুক্ত ছিল না।

যুক্তরাষ্ট্রের পর শান্তি রক্ষা মিশনে সবচেয়ে বেশি অনুদান দেয় চীন। তারা শান্তি রক্ষা বাজেটে প্রায় ১২০ কোটি ডলার অনুদান দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে গত জুলাই পর্যন্ত দেশটির ২০০ কোটি ডলার বকেয়া জমে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে শান্তি রক্ষা তহবিলের বাজেটে ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ ঘাটতি থাকার আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ।

শুধু তা-ই নয়, হোয়াইট হাউসের বাজেট দপ্তর ২০২৬ সালে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের জন্য অর্থায়ন বন্ধ করার প্রস্তাব দিয়েছে। তারা বলেছে, মালি, লেবানন ও গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে এসব মিশন ব্যর্থ হয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছেন, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সুযোগ নিচ্ছে। জানুয়ারিতে দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিদেশি সহায়তায় ব্যাপক কাটছাঁট করছেন তিনি।

জাতিসংঘের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা জানি যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ, বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা ও মানবিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করা বা অন্যান্য শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে এর প্রভাব পড়বে।’

ওই কর্মকর্তা বলেন, ১১টি শান্তি রক্ষা মিশনের ৯টিতে এক-চতুর্থাংশ শান্তিরক্ষী কমানোর প্রক্রিয়া কার্যকর করা হবে। এসব মিশন সম্ভাব্য বাজেটসংকটের জন্য আগেই বিকল্প পরিকল্পনা তৈরি করে রেখেছিল।

বর্তমানে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর উত্তরাঞ্চল, দক্ষিণ লেবানন, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, দক্ষিণ সুদান, পশ্চিম সাহারাসহ বিভিন্ন স্থানে জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশন কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিনিধি লুই চারবোনি বলেন, এ ঘোষণার ফলে মানবিক সহায়তা এবং সেই সহায়তার ওপর নির্ভরশীল বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যেতে পারে।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও আরও বড় পরিসরে সংস্থাটির কার্যকারিতা বৃদ্ধি ও খরচ কমানোর পথ খুঁজছেন। এ বছর ঠিক এমন এক সময়ে আন্তর্জাতিক এই সংস্থা ৮০ বছরে পা দিচ্ছে, যখন তারা অর্থসংকটে ভুগছে।

Share With Your Friends

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *