দুর্নীতির অভিযোগে চীনের সেনাবাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের নয়জন জেনারেলকে দল ও সামরিক বাহিনী থেকে বরখাস্ত করেছে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি। শুক্রবার এক বিবৃতিতে চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এই তথ্য নিশ্চিত করে। এটি সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে দেশটির সেনাবাহিনীতে পরিচালিত সবচেয়ে বড় দুর্নীতি দমন অভিযান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
২০২৩ সাল থেকে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান শুরু করেছেন। তবে এত উচ্চ পর্যায়ের সেনা কর্মকর্তাকে একসঙ্গে বরখাস্ত করার ঘটনা এর আগে দেখা যায়নি। বরখাস্তদের মধ্যে রয়েছেন সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের (সিএমসি) ভাইস চেয়ারম্যান জেনারেল হে ওয়েইডং এবং চীনা নৌবাহিনীর সাবেক রাজনৈতিক প্রধান অ্যাডমিরাল মিয়াও হুয়া।
৬৮ বছর বয়সী হে ওয়েইডং-এর পদচ্যুতি শুধু সেনাবাহিনীতেই নয়, রাজনীতিতেও বড় প্রভাব ফেলেছে। কারণ, তিনি একই সঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টির ২৪ সদস্যের পলিটব্যুরোরও সদস্য ছিলেন—যা দেশটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সংস্থা। এ ছাড়া তিনি পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) তৃতীয় সর্বোচ্চ কমান্ডার হিসেবে প্রেসিডেন্ট সি-এর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবেও পরিচিত ছিলেন।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাং শিয়াওগাং বলেন, বরখাস্ত করা কর্মকর্তারা দলীয় শৃঙ্খলা গুরুতরভাবে লঙ্ঘন করেছেন এবং দায়িত্ব পালনের সময় বিশাল অঙ্কের আর্থিক অপরাধে জড়িত ছিলেন বলে প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণ মিলেছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, তাঁদের অপরাধ “গুরুতর প্রকৃতির” এবং এর পরিণতি “অত্যন্ত ক্ষতিকর”। এটি দুর্নীতির বিরুদ্ধে দলে ও বাহিনীতে বড় সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বরখাস্তদের তালিকায় রয়েছেন—হে ওয়েইডং, মিয়াও হুয়া, হে হংজুন, ওয়াং সিউবিন, লিন সিয়াংইয়াং, কিন শুতং, ইয়ুআন হুয়াজি, ওয়াং হৌবিন এবং ওয়াং চুনিং। এদের অধিকাংশই তিন তারকা জেনারেল পদমর্যাদার কর্মকর্তা।
বিশ্লেষকদের মতে, সি চিন পিং “ঘর পরিষ্কার” করছেন। তাঁর এই পদক্ষেপের মাধ্যমে আসন্ন সেন্ট্রাল কমিটির চতুর্থ পূর্ণাঙ্গ সভায় সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনে নতুন সদস্য নিয়োগের পথ সুগম হবে। আটলান্টিক কাউন্সিলের ফেলো ওয়েন-টি সাং বলেন, “হে ও মিয়াওকে আনুষ্ঠানিকভাবে বরখাস্তের মাধ্যমে সি তাঁর প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ আরও শক্ত করতে চাইছেন।”
চীনের ইতিহাসে সাংস্কৃতিক বিপ্লব (১৯৬৬–১৯৭৬) পরবর্তী সময়ে সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের দায়িত্বে থাকা কোনো জেনারেলকে বরখাস্তের এটি প্রথম ঘটনা। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সামরিক বাহিনীর এই অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন আসন্ন রাজনৈতিক বৈঠকের দিক নির্দেশনায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।