গাজার বাসিন্দাদের জন্য সব ধরনের ভ্রমণ ভিসা স্থগিত করল যুক্তরাষ্ট্র

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক মার্কিন দক্ষিণপন্থী ইনফ্লুয়েন্সারের একের পর এক পোস্টের জের ধরে গাজাবাসীদের জন্য সব ধরনের ভ্রমণ ভিসা স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শনিবার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক্সে দেওয়া এক পোস্টে এ সিদ্ধান্তের কথা জানায়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘সাম্প্রতিক দিনগুলোতে সীমিতসংখ্যক অস্থায়ী চিকিৎসা ও মানবিক ভিসা দেওয়ার জন্য যে প্রক্রিয়া ও নীতিমালা ব্যবহার করা হয়েছে, আমরা তার পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা করছি। এ সময় গাজার বাসিন্দাদের জন্য সব ভ্রমণ ভিসা বন্ধ থাকবে।’’

ইনফ্লুয়েন্সার লরা লুমারের ভূমিকা

ঘটনার সূত্রপাত হয় এক চরম দক্ষিণপন্থী ইনফ্লুয়েন্সার লরা লুমারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টকে ঘিরে। তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। শুক্রবার লুমার এক্সে ক্ষোভ প্রকাশ করে দাবি করেন, গাজার ফিলিস্তিনিদের যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমণ ভিসা দেওয়া ‘‘অগ্রহণযোগ্য’’। তিনি তাদের ‘‘হামাসপন্থী, মুসলিম ব্রাদারহুডের সহযোগী এবং কাতারের অর্থপুষ্ট’’ বলে বর্ণনা করেন। যদিও এসব অভিযোগের কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি।

লুমারের সমালোচনার মূল কেন্দ্র ছিল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দাতব্য সংস্থা হিল প্যালেস্টাইন। সংস্থাটি জানিয়েছিল, তারা সম্প্রতি গাজায় গুরুতর আহত ১১ শিশু ও তাদের পরিবারের সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্রে এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। সংস্থার মতে, এটাই একবারে গাজা থেকে এতগুলো আহত শিশুকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসার নজির।

কিন্তু লুমার এক্সে পোস্ট দিয়ে লেখেন, ‘‘সত্যিই অগ্রহণযোগ্য। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওকে অবশ্যই বের করতে হবে কে এসব ভিসা অনুমোদন করেছে।’’ তিনি দাবি করেন, কাতার এয়ারওয়েজের মাধ্যমে কাতার এসব গাজাবাসীকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে এসেছে এবং ‘‘আমাদের দেশকে সন্ত্রাসী দিয়ে ভরিয়ে দিচ্ছে’’।

রিপাবলিকানদের প্রশংসা

লুমারের আহ্বানের পরই ভিসা স্থগিতের ঘোষণা আসে। পরবর্তীতে রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান র‌্যান্ডি ফাইন প্রকাশ্যে লুমারকে প্রশংসা করেন। তিনি এক্সে লিখেন, ‘‘এটি উদ্‌ঘাটন করার জন্য এবং আমাকে ও অন্য কর্মকর্তাদের সতর্ক করার জন্য লরা লুমার প্রশংসার দাবিদার। ভালো কাজ, লরা।’’

মানবাধিকার সংগঠনের ক্ষোভ

অন্যদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। প্যালেস্টাইন চিলড্রেনস রিলিফ ফান্ড এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘‘গত ৩০ বছরে আমরা হাজার হাজার ফিলিস্তিনি শিশুকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছি। এই প্রক্রিয়া বন্ধ করা মানে গাজার শিশুদের জীবন থেকে চিকিৎসার সুযোগ কেড়ে নেওয়া।’’

সংস্থাটির মতে, গাজার স্বাস্থ্য অবকাঠামো ধ্বংসপ্রায় অবস্থায় রয়েছে। চিকিৎসার সুযোগ না পেলে আহত শিশুদের ‘‘কল্পনাতীত কষ্ট সহ্য করতে হবে অথবা মৃত্যুবরণ করতে হবে’’।

সরকারি পদ ছাড়াই প্রভাব

যদিও লরা লুমারের যুক্তরাষ্ট্রে কোনো সরকারি পদ নেই, তবু প্রশাসনের ওপর তাঁর প্রভাব অস্বীকার করার উপায় নেই। তিনি একাধিকবার শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করাতে সফল হয়েছেন। শীর্ষ কর্মকর্তাদের ট্রাম্পের প্রতি ‘‘অবিশ্বস্ত’’ বলে আখ্যা দিয়ে তাঁদের অপসারণে জোর দাবি তুলেছিলেন লুমার।

গত এপ্রিলেই ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির প্রধান টিমোথি হফ এবং তাঁর সহকারী ওয়েন্ডি নোবেলকে বরখাস্ত করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। জানা যায়, লুমারের সঙ্গে প্রেসিডেন্টের বৈঠকের পরই ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়। লুমার নিজেও এক্সে দাবি করেন, ‘‘আর কোনো সাংবাদিক বা কনটেন্ট ক্রিয়েটর এতজন বাইডেন আমলের কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করাতে সক্ষম হননি।’’

বিতর্কিত ইতিহাস

লুমার মার্কিন সমাজে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্কিত। তিনি অতীতে বর্ণবাদী ষড়যন্ত্রতত্ত্ব প্রচার করেছেন এবং ৯/১১ হামলা ‘‘ভেতরের কাজ’’ ছিল বলে দাবি করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে তিনি ‘‘চরম দক্ষিণপন্থী কণ্ঠস্বর’’ হিসেবে পরিচিত। সমালোচকরা বলছেন, গাজার শিশুদের চিকিৎসার সুযোগ বন্ধ করতেও তাঁর প্রভাব পড়েছে—যা মানবিক সংকটকে আরও জটিল করে তুলবে।

Share With Your Friends

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *