এবার পশ্চিম তীরের পুরোটা দখলে নিতে চায় ইসরায়েল

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় প্রায় ২১ মাস ধরে নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এখন দখলকৃত পশ্চিম তীর স্থায়ীভাবে দখলে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে ইসরায়েল। চলতি মাসের মধ্যেই দেশটির পার্লামেন্ট নেসেটে পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত করে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টির মন্ত্রিসভার সদস্যরা। গত বুধবার তাঁরা এক আবেদনে এ আহ্বান জানান।

মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজায় যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন। তিনি জানান, গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি চূড়ান্ত করার জন্য ‘প্রয়োজনীয় শর্তাবলি’ মেনে নিয়েছে ইসরায়েল। ট্রাম্পের ওই ঘোষণার পর আগামী সপ্তাহে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করতে ওয়াশিংটনে যাওয়ার কথা জানান নেতানিয়াহু। বৈঠকে হামাসের সঙ্গে গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু বৈঠকের আগে পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত করার দাবি সামনে আনা হলো।

তবে নেতানিয়াহুর দপ্তর থেকে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তাঁর দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও কৌশলগত বিষয়ক মন্ত্রী রন ডারমার এই আবেদনে সই করেননি। সোমবার থেকে তিনি ওয়াশিংটনে অবস্থান করছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার গাজায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১১৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে ১২ জন ত্রাণপ্রার্থীও ছিলেন।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা মন্ত্রিসভার সদস্য ও নেসেটের সদস্যরা জুদিয়া ও সামারিয়া অঞ্চলে অবিলম্বে ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব ও আইন প্রয়োগের আহ্বান জানাচ্ছি।’ এখানে জুদিয়া ও সামারিয়া বলতে ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরের একটি অঞ্চলকে বোঝানো হয়েছে।এদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গতকাল বৃহস্পতিবার উপত্যকাজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১১৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে ১২ জন ত্রাণপ্রার্থীও ছিলেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৫৮১ জন। দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে মানবাধিকারবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি ফ্রানচেসকা আলবানিজ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যামূলক অভিযান’ চালানোর অভিযোগে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি দেশটির ওপর পূর্ণাঙ্গ অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ, বাণিজ্য ও আর্থিক সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান জানিয়েছেন।

গাজার ৮৫% এলাকা ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে

গাজা উপত্যকার প্রায় ৮৫ শতাংশ এলাকা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে কিংবা উচ্ছেদ আদেশের মুখে রয়েছে। বুধবার জাতিসংঘ এমন তথ্য জানিয়েছে। সংস্থার মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, উচ্ছেদ আদেশগুলো মানুষকে জরুরি সহায়তা পাওয়া থেকে মারাত্মক বঞ্চিত করছে এবং বিপদের মধ্যে থাকা মানুষের কাছে ত্রাণকর্মীদের পৌঁছানো কঠিন করে তুলছে।

স্টিফেন ডুজারিক জানান, খান ইউনিসের দুটি এলাকায় সর্বশেষ উচ্ছেদ আদেশ দেওয়া হয়েছে। ওই এলাকায় প্রায় ৮০ হাজার মানুষের বসবাস। তিনি আরও উল্লেখ করেন, জাতিসংঘের পানি, স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন নিয়ে কাজ করা অংশীজনেরা জানিয়েছেন, এই আদেশের কারণে আল-সাতার নামের একটি গুরুত্বপূর্ণ জলাধারে এখন প্রবেশ করা যাচ্ছে না।

হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার অঙ্গীকার

যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার মধ্যেই নেতানিয়াহু হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার অঙ্গীকার করেছেন। বুধবার সীমান্ত শহর আশকেলনে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ অঙ্গীকার করেন।

Share With Your Friends

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *