২০২৫ সালে বিশ্ববাজারে চাহিদার তুলনায় তেলের সরবরাহ বাড়বে: আইইএ

২০২৫ সালে বিশ্ববাজারে জ্বালানি সরবরাহ বাড়তে পারে। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ) সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এই তথ্য দিয়েছে।

রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা আগামী কয়েক বছরে কমতে পারে। এ সময় ওপেক ও সহযোগী দেশগুলো জ্বালানি তেল উত্তোলন হ্রাস করলেও যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশে উত্তোলন বাড়বে। ফলে আগামী বছর চাহিদার তুলনায় জ্বালানি তেলের সরবরাহ বেশি হতে পারে।

আইইএ জানিয়েছে, ওপেক ও সহযোগী দেশগুলোর উত্তোলন হ্রাস অব্যাহত থাকলেও আগামী বছর চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত ১০ লাখ ব্যারেল তেল সরবরাহ হতে পারে। এর মূল কারণ হলো চীনের নিম্নমুখী চাহিদা। এতে তেলের দাম আরও কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা। মার্কিন বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক জেপি মরগ্যান সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলেছে, আগামী বছরে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারে নেমে আসতে পারে।

বিশ্বে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা চীন। কিন্তু চীনের প্রবৃদ্ধির গতি কমছে। এ ছাড়া সে দেশে বৈদ্যুতিক যানবাহনের ব্যবহার বাড়ছে। কমছে জ্বালানি তেলের চাহিদা। প্যারিসভিত্তিক সংস্থাটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, পরিবহনসহ অন্যান্য খাতে পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানির চাহিদা বাড়ছে চীনে। স্বাভাবিকভাবেই দেশটিতে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমছে। চীন কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবেই তা করা হবে।

পেট্রোলিয়াম রপ্তানিকারক দেশগুলোর জোট ওপেক, রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশ মিলে গঠিত হয়েছে ওপেক প্লাস। সংগঠনটি গত বছর দুয়েক ধরে জ্বালানি তেলের সরবরাহ কমিয়ে মূল্যবৃদ্ধির চেষ্টা করেছে। কিন্তু সেই ধারা থেকে তারা বেরিয়ে আসবে বলে জানিয়েছে। বাজার–বিশ্লেষকেরা জানান, আগামী বছর অতিরিক্ত সরবরাহের সম্ভাবনা ওপেক প্লাসের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে।

ওপেক প্লাসের সর্বশেষ প্রতিবেদনে আগামী বছরের জন্য বৈশ্বিক অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা বৃদ্ধির পূর্বাভাস অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। ওই সময় দৈনিক চাহিদা গড়ে ৯ লাখ ৯০ হাজার ব্যারেল হতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

আইইএ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী বছর ওপেক প্লাস-বহির্ভূত দেশগুলোয় দৈনিক গড়ে ১৫ লাখ ব্যারেল জ্বালানি তেলের উত্তোলন বাড়তে পারে। এই উত্তোলন বৃদ্ধিতে মূল ভূমিকা পালন করবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, গায়ানা ও আর্জেন্টিনার মতো দেশ।

এদিকে চলতি বছর বৈশ্বিক অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা কিছুটা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আইইএ। চলতি বছরের জন্য পণ্যটির চাহিদা বৃদ্ধির পূর্বাভাস ৬০ হাজার ব্যারেল বাড়িয়ে দৈনিক গড়ে ৯ লাখ ২০ হাজার ব্যারেল করা হয়েছে।

চীনের নিম্নমুখী চাহিদায় ওপেকের অনেক চেষ্টার পরও বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম সেভাবে বাড়েনি। উল্টো সম্প্রতি তেলরে দাম কমার ধারা দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) সুদহার কমানোর সম্ভাবনা কমে যাওয়ায় গত শুক্রবার জ্বালানি তেলের দাম ২ শতাংশের বেশি কমেছে।

অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের দাম শুক্রবার আগের দিনের তুলনায় ১ ডলার ৫২ সেন্ট বা ২ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ কমেছে। প্রতি ব্যারেলের মূল্য দাঁড়িয়েছে ৭১ ডলার ৪ সেন্ট। ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম শুক্রবার কমেছে আগের দিনের তুলনায় ১ ডলার ৬৮ সেন্ট বা ২ দশমিক ৪৫ শতাংশ। ব্যারেলপ্রতি মূল্য দাঁড়িয়েছে ৬৭ ডলার ২ সেন্ট। গত সপ্তাহে ব্রেন্ট ও ডব্লিউটিআইয়ের দাম যথাক্রমে ৪ ও ৫ শতাংশ কমেছে।

এদিকে ডাচ বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক ও আর্থিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান রাবোব্যাংক ইন্টারন্যাশনাল সম্প্রতি বলেছে, ২০২৫ সালে বাজারে দৈনিক প্রায় সাত লাখ ব্যারেল অতিরিক্ত সরবরাহ থাকতে পারে। বিষয়টি হলো, তেলের দাম বাড়াতে ওপেক ও সহযোগী দেশগুলো যে এত দিন উৎপাদন হ্রাসের ধারায় ছিল, সেই ধারা থেকে তারা বেরিয়ে আসছে। বাজারে সরবরাহ বাড়বে। ফলে দামও কমবে।

Share With Your Friends

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *