চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারও উত্তাল ছাত্রসমাজ। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক শিক্ষার্থীকে স্থানীয়দের মারধরের ঘটনায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) সকাল থেকে শুরু হওয়া এ বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা দফায় দফায় স্লোগান ও প্ল্যাকার্ড হাতে ন্যায্য বিচারের দাবি জানান।
ঘটনার সূত্রপাত সোমবার (১৪ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১০টার দিকে। নববর্ষ উদযাপন শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সুলতানুল আরেফিন বাইক নিয়ে রেলক্রসিং এলাকায় পৌঁছালে এক সিএনজি চালক তার পায়ের ওপর চাকা তোলে দেয়। উভয়ের মাঝে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে কিছু বহিরাগত যুবক বাইকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো দেখে আরেফিনের ওপর চড়াও হয়।
সুলতানুল আরেফিন বলেন, “আমি বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে প্রক্টরিয়াল বডিকে জানাই, কিন্তু কোনো সাড়া পাইনি। এমনকি উপ-উপাচার্যকেও ফোন করলে তিনি সকাল ৮টায় আসবেন বললেও তিনি আসেননি।”
এ ঘটনায় শিক্ষার্থীরা গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয় এবং সকাল ৯টা থেকে বিক্ষোভে অংশ নেন। শিক্ষার্থীদের হাতে দেখা গেছে, ‘স্থানীয়রা মারলো কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘আমার ভাইয়ের উপর হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’ লেখা প্ল্যাকার্ড।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. আব্দুর রহমান বলেন, “প্রশাসনের বারবার নিরাপত্তা ব্যর্থতায় আমরা অতিষ্ঠ। ফোন করেও প্রক্টরদের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাইনি। এমন পরিস্থিতিতে তালা দেওয়া ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় ছিল না।”
ঘটনার তদন্ত ও বিচার না হওয়ার দীর্ঘসূত্রিতার অভিযোগ তুলে শিক্ষার্থীরা বলেন, এটাই প্রথম নয়—এর আগেও এমন হামলা হয়েছে, কিন্তু প্রশাসন কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
চবি সহকারী প্রক্টর নুরুল হামিদ কানন বলেন, “ঘটনাটি ন্যাক্কারজনক। আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি। তবে মূল ফটক তালাবদ্ধ থাকলে বাইরে নেতিবাচক বার্তা যেতে পারে।”
চবি সিএনজি স্টেশনের লাইন সেক্রেটারি মো. সেকান্দার বলেন, “ওই চালক আমাদের সমিতির কেউ নন। তিনি বহিরাগত। আমাদের সদস্য হলে ব্যবস্থা নিতে পারতাম।”
অবশেষে প্রশাসনের আশ্বাসে বেলা ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা তালা খুলে দেয়। তবে ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দোষীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনা শুধু একজন শিক্ষার্থীর ওপর হামলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়—এটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়হীনতার আরেকটি প্রতিচ্ছবি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মত একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসন বারবারই ব্যর্থ হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে।
ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।