বিরোধীদের হাতেই ইস্তাম্বুল, নতুন ছক এরদোগানের

দুর্নীতির অভিযোগে তুরস্কের ইস্তাম্বুলের মেয়র পদ থেকে সরিয়ে ইকরাম ইমামোগলুকে গ্রেফতারে টানা ৭ দিন আন্দোলন করেছে প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি)। তাদের আশঙ্কা ছিল ইস্তাম্বুলে কাইয়ুম (সরকারি প্রশাসক) নিয়োগ হবে। ইস্তাম্বুল হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। সে কারণেই তীব্র সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলে তারা। সেই আন্দোলনে কেঁপে ওঠে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগানের মসনদও। মেয়রের মুক্তির আন্দোলন থেকে যখন সরকার উৎখাতের আন্দোলনের ডাক আসে তখনই টনক নড়ে এরদোগানের। বিরোধী জোটের সাথে সরকারের আলোচনা হয়। সমঝোতা হয়। সমঝোতা অনুযায়ী ইস্তাম্বুলের ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসাবে বিরোধী দল সিএইচপির নেতা নূরী আসলানকে নির্বাচিত করা হয়। বিনিময়ে ইস্তাম্বুলের সিটি অফিসের সামনের লাগাতার আন্দোলন তুলে নেন সিএইচপির চেয়ারম্যান ওজগুর ওজেল।

বুধবার প্রথম দফার ভোটে আসলান ১৭৩ ভোট পান। আর  এরদোগানের জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (একে পার্টি) প্রার্থী জেইনেল আবিদিন ওকুল পান ১২৩ ভোট। কেউ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় ভোট দ্বিতীয় রাউন্ডে গড়ায়। এতে আসলান পান ১৭৭ ভোট। ওকুল পান ১২৫ ভোট। মূলত এটি ছিল দেওয়া-নেওয়ার নির্বাচন। এই জয়কে নিজের দলের বিজয় হিসেবেই দেখছে বিরোধী দল। কারণ আন্দোলনের ফলে ইস্তাম্বুল তাদের হাতেই থাকছে। অন্যদিকে, এরদোগানের জন্যও ইতিবাচক দিক হলো আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য তার সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষিত হয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগ কারাগারে গেছে।

এছাড়া, আপাতত সরকার উৎখাতের বড় ধরনের আন্দোলনকে থামিয়ে দিতে পেরেছেন কোনো রক্তপাত ছাড়াই। তবে আন্দোলন পুরোপুরি থামেনি। মঙ্গলবার রাতেই সিএইচপির চেয়ারম্যান ওজগুর ওজেল বলেছেন, ‘আন্দোলন নতুনরূপে চলবে। ঈদের পর তুরস্কের সব শহরে বড় বড় জনসমাবেশ হবে।  এতে ইমামোগলুর মুক্তির দাবির পাশাপাশি আগামী নির্বাচনের জন্য নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা করা যাবে।’ বৃহস্পতিবার একই কথা বলেছেন বিবিসিকেও। বলেন, ‘তরস্কে আগাম নির্বাচনের ডাক কিংবা মেয়র ইমামোগলুকে কারাগার থেকে মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত দেশটির প্রতিটি শহরে তাদের বিক্ষোভ চলবে। দেশজুড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসাবে শনিবার ইস্তাম্বুলে বড় ধরনের বিক্ষোভ হবে। আমরা যে শহরেই যাব, সেখানেই তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সমাবেশ হবে।’

তবে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন (২০২৮) নিয়ে নতুন ছক কষছেন এরদোগানও। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী তিনি দুবারের বেশি প্রার্থী হতে পারবেন না। তাই আগাম নির্বাচনই তার প্রার্থী হবার সবচেয়ে সহজ পথ। সেই নির্বাচনের জন্য শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ইস্তাম্বুলের সাবেক মেয়র ইমামোগলুকে একাধারে কারাগারে, অন্যদিকে সার্টিফিকেট জালিয়াতির কারণে নির্বাচনে অযোগ্য। সেদিক থেকে তিনি প্রথম রাউন্ডে এগিয়ে আছেন।

এদিকে  ওজেল বলেছন, আগামী নির্বাচনে যদি ইমামোগলু প্রার্থী হতে না পারেন তাহলে তার পক্ষ থেকে অন্য কেউ প্রার্থী হবেন। তার নামেই ভোট চাওয়া হবে। এখানে মূলত ইমামোগলু অবিচারের শিকার হয়েছে এই বয়ান তৈরি করে পাবলিক সিমপ্যাথি পাওয়ার কৌশল নেবে বিরোধী দল। তবে পর্দার আড়ালে আরেকটি খেলা আছে। অনেকের সন্দেহ, সরকারের সাথে যোগসাজশ করে ওজেল নিজেই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে ইমামোগলুকে কারাগারে পাঠিয়েছেন। কারণ পরিচয় গোপন রেখে ইমামোগলুর দুর্নীতির দলিল বিরোধী দল থেকেই আদালতে পাঠানো হয়েছে। রাজনীতিতে সবই সম্ভব।

এদিকে ওজেলকেও এত সহজে প্রেসিডেন্ট হতে দেবেন না এরদোগান। কুর্দি কার্ড নিয়ে খেলা শুরু করেছেন এরদোগান। কুর্দিশদের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ছিলেন সালাউদ্দিন দেমিরতাস। সন্ত্রাসের অভিযোগের গত নির্বাচন তিনি কারাগারেই কাটিয়েছেন। এই ঈদে তাকে মুক্তি দেবে সরকার। ফলে এতদিন এরদোগানের বিরুদ্ধে একক প্রার্থী দিয়ে কুর্দিশদের যে ১৫ ভাগ ভোট সিএইচপি তার ঘরে নিয়েছে আগামীতে সেটি নাও হতে পারে। কুর্দিরা আগের মতো নিজেদের থেকে প্রেসিডেন্ট পার্থী দিতে পারে। সেটা হলে বিরোধী দলের ভোট ভাগ হয়ে যাবে। তবে তার পরও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট হতে এরদোগানকে ৫০ ভাগের বেশি ভোট পেতে হবে। সেটি করতে হলে এরদোগানকে মিত্রের সংখ্যা বাড়াতে হবে। কমাতে হবে মুদ্রাস্ফীতি। শক্তিশালী করতে হবে অর্থনীতিকে। তুর্কিরা রাজনীতির চেয়ে অর্থনীতিকে বেশি গুরুত্ব দেয়। পেট শান্তি তো সব শান্তি। 

Share With Your Friends

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *