ট্রাম্প-মোদির বৈঠক আয়োজনের চেষ্টা করছেন ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকেরা

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে ওয়াশিংটনে বৈঠক আয়োজনের চেষ্টা করছেন দুই দেশের কূটনীতিকেরা। এ বিষয়ে অবগত ভারতীয় দুটি সূত্র রয়টার্সকে এই তথ্য জানিয়েছে।

চীনকে ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অংশীদার ভারত। ট্রাম্প প্রশাসনের সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়াতে আগ্রহী নয়াদিল্লি। পাশাপাশি নিজেদের দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষ কর্মী ভিসা পাওয়া সহজ করতে চায় ভারত। দুই নেতার বৈঠক হলে সেখানে এ দুই বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে।

আলোচনা চললেও ফেব্রুয়ারি মাসেই যে ট্রাম্প ও মোদির বৈঠক হচ্ছে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। সূত্রগুলো বলছে, চলতি বছরের শেষে ভারতে কোয়াডের বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। তখন কোয়াড তথা ভারত, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের নেতারা ভারতে উপস্থিত থাকবেন। এই শীর্ষ সম্মেলন চলাকালে মোদি-ট্রাম্পের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হতে পারে, এই সম্ভাবনা আগে থেকে ছিল।

গত সোমবার (২০ জানুয়ারি) ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় দফায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়েছেন। ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফেরায় যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া ভারতীয় পণ্যে শুল্ক আরোপের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ট্রাম্প বলেছেন, ভারতে রপ্তানি করা যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করা রয়েছে। পাল্টায় ভারতের পণ্যেও শুল্ক আরোপের পক্ষে অবস্থানের ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।

কিন্তু নয়াদিল্লির সূত্রগুলো বলছে, ওয়াশিংটনকে কিছু ছাড় দিতে প্রস্তুত ভারত। যুক্তরাষ্ট্রের আরও বেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে প্রণোদনামূলক নানা সুবিধা দিতেও দরজা খোলা রাখছে দেশটি।

ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারত সফর করেছিলেন। সে সময় মোদির নিজের শহর আহমেদাবাদের একটি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এক লাখের বেশি মানুষ ট্রাম্পকে দেখতে জড়ো হয়েছিলেন। সেখানে তিনি ভারতকে বিরাট বাণিজ্য চুক্তি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের হিউস্টনে ২০১৯ সালে ট্রাম্প ও মোদি একসঙ্গে একটি শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছিলেন। ‘হাউডি মোদি’ নামের ওই শোভাযাত্রায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষ অংশ নেন, যাঁদের অধিকাংশই ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।

 ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর (বাঁয়ে) ও যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। ওয়াশিংটন ডিসিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরে, ২১ জানুয়ারি ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্র ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ১১৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল। এ সময় ভারতের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ছিল ৩২ বিলিয়ন ডলার।

ট্রাম্প-মোদির সম্ভাব্য বৈঠকে আরও যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে, সেগুলোর মধ্যে প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা খাতে অংশীদারত্ব বৃদ্ধি অন্যতম বলে জানিয়েছে সূত্রগুলো।

দুই নেতার মধ্যে আলোচনার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে অভিবাসন। ট্রাম্প অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে দক্ষ বৈধ শ্রমিকদের বিষয়ে তিনি উদারহস্ত বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প।

তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিপুলসংখ্যক পেশাদার কর্মীর জন্য পরিচিতি রয়েছে ভারতের। দেশটির এই কর্মীদের অনেকে বিভিন্ন দেশে কাজ করেন। তাঁদের একটি বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষ কর্মীদের জন্য প্রদত্ত ভিসা এইচ-ওয়ান বি–এর আওতায় দেশটিতে রয়েছে।

ট্রাম্পের সোমবারের অভিষেক অনুষ্ঠানে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর অংশ নিয়েছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। মঙ্গলবার তাঁদের ওই বৈঠকে ‘অনিয়মিত অভিবাসন’বিষয়ক উদ্বেগগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে।

Share With Your Friends

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *