রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের তিন বছরেরও বেশি সময় পর চাঞ্চল্যকর দাবি তুলেছে কিয়েফ। ইউক্রেন জানিয়েছে অন্তত 155 জন চীনা যোদ্ধা রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ করছে। ইতমধ্যে দুইজন চীনা যোদ্ধাকে বন্ধীও করা হয়েছে বলে দাবি ইউক্রেনের। এসব যোদ্ধার নাম ও পাসপোর্ট তথ্য ইউক্রেনের গোয়েন্দাদের হাতে রয়েছে।
অন্যদিকে চীন এই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে এবং জানিয়েছে তারা এ বিষয়ে কিয়েবের সঙ্গে তথ্য যাচাই করছে। ঘটনার গুরুত্ব এতটাই যে প্রথমবারের মতো ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলদমির জেলেনস্কি নিজেই বিষয়টি গণমাধ্যমের সামনে আনেন।
স্থানীয় সময় বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে জেলোনস্কি বলেন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রাশিয়ার হয়ে চীনা নাগরিকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়েছে। তিনি জানান 155 জন চীনা যোদ্ধার নাম ও পরিচয়পত্রের তথ্য ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থার কাছে রয়েছে। জেলোনস্কির ভাষায় আমাদের কাছে শক্ত প্রমাণ আছে তবে এই সংখ্যা আরো বেশি হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
প্রেসিডেন্ট আরো জানান ইউক্রেনীয় সেনাদের বিনিময়ে বন্ধী চীনা যোদ্ধাদের ফেরত দিতে তার কোন আপত্তি নেই। তিনি বলেন আমরা যুদ্ধবন্দী বিনিময়ের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানে প্রস্তুত। এই প্রস্তাব থেকে স্পষ্ট ইউক্রেন বিষয়টিকে শুধুমাত্র সামরিক পর্যায়ে সীমাবদ্ধ না রেখে কূটনৈতিকভাবে সমাধান করতে চায় ।
এদিকে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম ইউক্রেনাসকা প্রাবদা জানিয়েছে আটক হওয়া এক চীনা যোদ্ধা নিজেই স্বীকার করেছে তিনি 3480 ডলার ঘুষ দিয়ে রুশ সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছেন । কারণ তিনি রাশিয়ার নাগরিকত্ব পেতে আগ্রহী ছিলেন। এতে বোঝা যাচ্ছে যুদ্ধে শুধু রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোর্ষকতায় নয় ব্যক্তিগত স্বার্থেও কিছু বিদেশী নাগরিক অংশ নিচ্ছেন ।
তবে ইউক্রেনের এমন বিস্ফোরক দাবির বিরুদ্ধে করা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে চীন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন চীনা নাগরিকরা রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করছে এই ধরনের অভিযোগ একেবারেই ভিত্তিহীন।
চীন সরকার সবসময়ই তার নাগরিকদের সশস্ত্র সংঘাতে জড়াতে নিরুৎসাহিত করে। পাশাপাশি তিনি জানান এ নিয়ে কিয়েভের সঙ্গে আলোচনা চলছে এবং তথ্য যাছাই করা হচ্ছে। চীন দাবি করে রাশিয়া ইউক্রেন সংঘাতে তাদের ভূমিকা নিরপেক্ষ । তারা যুক্তরাষ্ট্র বা পশ্চিম দেশগুলোর মত কোন পক্ষ নিয়ে সেনা পাঠায় না ।
যদিও বাস্তবতা বলছে 2022 সালে যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই কূটনৈতিকভাবে রাশিয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে বেইজিং। রাশিয়া এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন মন্তব্য করেনি । তবে কিয়েভের দাবি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত পর্যায়ে নয় চীনা নাগরিকদের রুশ সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্তির পেছনে প্রাতিষ্ঠানিক যোগসূত্র থাকতে পারে ।
এর আগে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ তুলেছিল ইউক্রেন ও পশ্চিমা বিশ্ব । রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে উত্তর কোরিয়ার সেনারা। এই নতুন দাবি যুদ্ধের আন্তর্জাতিক মাত্রাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে । যদি ইউক্রেনের বক্তব্য সত্যি হয় তাহলে তা শুধু রাশিয়ার নয় বরং বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন এক জটিলতা তৈরি করবে ।
যেখানে সরাসরি সেনা পাঠানো ছাড়াও প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলো অপ্রকাশ্যভাবে যুদ্ধ ময়দানে সক্রিয় হতে পারে। বিষয়টি ভবিষ্যতের ভূরাজনীতিতে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে যদি প্রমাণিত হয় যে এসব বিদেশী যোদ্ধাদের কার্যকলাপে কোন রাষ্ট্রীয় মদদ রয়েছে ।