চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) এবার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সমাবর্তনের আয়োজন করতে যাচ্ছে। ২০০৭-০৮ থেকে ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থীরা এই সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। তবে, সমাবর্তনে অংশগ্রহণের জন্য একটি শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে, যা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যারা ইতিমধ্যে তাদের মূল সার্টিফিকেট (মেইন সার্টিফিকেট) তুলে নিয়েছেন, তারা এই সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। এই সিদ্ধান্তটি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে অংশগ্রহণের জন্য আবেদনের শর্তাবলীতে উল্লেখ করা হয়েছে, যারা ইতিমধ্যে মূল সার্টিফিকেট তুলে নিয়েছেন, তারা সমাবর্তনে অংশ নিতে পারবেন না। এই শর্তটি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কি আশা করে যে শিক্ষার্থীরা যুগের পর যুগ মূল সার্টিফিকেট না তুলে বসে থাকবেন? চাকরি, উচ্চশিক্ষা বা অন্যান্য প্রয়োজনে মূল সার্টিফিকেট তোলা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এই শর্তটি শিক্ষার্থীদের জন্য অযৌক্তিক ও অবিচারপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকে।
শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে তাদের ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন। অনেকেই বলেছেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে সমাবর্তনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন, কিন্তু এখন শুনছেন যে মূল সার্টিফিকেট তুলে ফেলায় তারা এই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারবেন না। একজন শিক্ষার্থী বলেছেন, “আমি কয়েকদিন আগেই সার্টিফিকেট তুলেছি। এখন শুনছি আমি সমাবর্তনে অংশ নিতে পারব না। এটা কি ন্যায়সংগত?”
অনেক শিক্ষার্থী প্রশ্ন তুলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কেন প্রতি বছর বা নিয়মিত বিরতিতে সমাবর্তনের আয়োজন করেনি? দীর্ঘ ৯ বছর পর সমাবর্তন আয়োজন করা হচ্ছে, আর এই সময়ের মধ্যে যারা সার্টিফিকেট তুলে নিয়েছেন, তাদেরকে বঞ্চিত করার সিদ্ধান্তটি মেনে নেওয়া কঠিন। একজন সাবেক শিক্ষার্থী বলেছেন, “সমাবর্তন প্রতিটি গ্র্যাজুয়েটের স্বপ্ন। আমরা চাকরি বা উচ্চশিক্ষার জন্য সার্টিফিকেট তুলেছি। এটা আমাদের দোষ নয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল নিয়মিত বিরতিতে সমাবর্তনের আয়োজন করা।”
শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন। অনেকেই বলেছেন, যারা ইতিমধ্যে সার্টিফিকেট তুলে নিয়েছেন, তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করা হোক। যেমন, নির্দিষ্ট ফি প্রদান করে বা সার্টিফিকেট জমা দিয়ে সমাবর্তনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হোক। একজন শিক্ষার্থী বলেছেন, “২০১৬ সালের সমাবর্তনে যারা সার্টিফিকেট তুলে নিয়েছিলেন, তাদেরকে নতুন ফি নিয়ে সমাবর্তনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এবারও একই পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে।”
সমাবর্তনে অংশগ্রহণের জন্য নির্ধারিত ফি নিয়েও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমালোচনা রয়েছে। অনার্স ও মাস্টার্সের জন্য আলাদা আলাদা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে, যা অনেকের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে যারা বেকার বা টিউশনি করে আয় করেন, তাদের জন্য এই ফি প্রদান করা কঠিন। অনেকেই বলেছেন, ফি কমানো হোক বা একীভূত করা হোক, যাতে সবাই অংশগ্রহণ করতে পারেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন প্রতিটি গ্র্যাজুয়েটের জন্য একটি আবেগঘন ও স্মরণীয় মুহূর্ত। এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা প্রতিটি শিক্ষার্থীর অধিকার। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত শিক্ষার্থীদের এই অধিকার নিশ্চিত করা এবং তাদের যৌক্তিক দাবিগুলো বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা। আশা করা যায়, কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের কথা শুনবে এবং সমাবর্তনে অংশগ্রহণের জন্য সকলকে সুযোগ দেবে।