চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ কেলেঙ্কারি, ৫৮ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কর্মকর্তা বহিষ্কার

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে নিয়োগের নামে প্রার্থীদের কাছ থেকে ৫৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রেজিস্ট্রার অফিসের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় নিম্নমান সহকারী মো. এমরান হোসেনকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পাশাপাশি, এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত অন্য কোনো ব্যক্তি বা সিন্ডিকেট রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি চবিতে বিভিন্ন শূন্য পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলে একটি চক্র প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। অভিযোগ রয়েছে, রেজিস্ট্রার অফিসের জেনারেল শাখার নিম্নমান সহকারী মো. এমরান হোসেন এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি ১৫ জন প্রার্থীর কাছ থেকে মোট ৫৮ লাখ টাকা গ্রহণ করেন, কিন্তু কোনো চাকরি প্রদান করেননি।

এ বিষয়ে অভিযুক্তদের কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করলে বিষয়টি তদন্তের আওতায় আসে। প্রাথমিক তদন্তে এমরান হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তাকে সাময়িকভাবে চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হয়।

মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এক অফিস আদেশে এমরান হোসেনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেন। আদেশে উল্লেখ করা হয়, “চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী (দক্ষতা ও শৃঙ্খলা) সংবিধির ১৫(বি) ধারা অনুযায়ী তাকে তদন্তের স্বার্থে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। তবে তিনি এই সময়ে নিয়মিত ভাতা পাবেন।”

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, “এ ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে আমরা শূন্য সহনশীলতা নীতি অনুসরণ করছি। এমরান হোসেনের বিরুদ্ধে আগেও অনিয়মের অভিযোগ ছিল, কিন্তু যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এবার কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।”

ঘটনাটির গভীরে যাওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটির সদস্যরা হলেন:

  • নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এন এম সাজাদুল হক
  • শিক্ষক নিয়োগ শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. হাছান মিয়া

তদন্তে এমরান হোসেন ছাড়াও অন্য কোনো কর্মকর্তা বা শিক্ষক জড়িত আছেন কিনা, তা খুঁজে দেখা হবে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক বছর ধরে চবিতে একটি নিয়োগ সিন্ডিকেট সক্রিয় ছিল, যারা উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের নাম ব্যবহার করে টাকা আদায় করত।

এই ঘটনায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অনেকেই দাবি করেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বাড়াতে হবে। উপ-উপাচার্য ড. কামাল উদ্দিন বলেন, “আমরা একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক নিয়োগ পদ্ধতি চালু করতে কাজ করছি। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যাতে না ঘটে, সে জন্য কঠোর নজরদারি করা হবে।”

এদিকে, অভিযুক্ত এমরান হোসেনকে প্রথমে পুলিশে সোপর্দ করার সিদ্ধান্ত নিলেও পরে তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। তবে, তদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের একটি শীর্ষস্থানীয় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, যা ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২৩০০ একরের বেশি জায়গাজুড়ে অবস্থিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৩০,০০০ শিক্ষার্থী ও ১,২০০+ শিক্ষক রয়েছেন। তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিয়োগ ও প্রশাসনিক অনিয়মের বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছে, যা প্রতিষ্ঠানের সুনামকে ক্ষুণ্ন করছে।

এই ঘটনায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপই নির্ধারণ করবে, বিশ্ববিদ্যালয় কি এই কলঙ্ক মোচন করতে সক্ষম হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারি কামনা করছেন সচেতন মহল।

Share With Your Friends

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *