চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ম সমাবর্তনে উপস্থিত থাকবেন প্রধান উপদেষ্টা ডাঃ মোহাম্মদ ইউনুস, তিনি (ডি.লিট) সম্মাননা পাচ্ছেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) তার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ সমাবর্তন আয়োজনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। আগামী ১৪ মে ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম সমাবর্তন। এই সমাবর্তনকে ঘিরে তৈরি হয়েছে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা। বিশেষ করে এই সমাবর্তনে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে ডক্টর অব লেটার্স (ডি.লিট) সম্মাননা প্রদান করা হবে, যা এই আয়োজনকে আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে।

চবির ৫ম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে ২০২৫ সালের ১৪ মে। স্থান হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মাঠ। এই সমাবর্তনে অংশগ্রহণের জন্য অনলাইন রেজিস্ট্রেশন শুরু হবে ১৫ মার্চ ২০২৫ থেকে। রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর অংশগ্রহণকারীদের নির্দিষ্ট ফি পরিশোধ করতে হবে।

এই সমাবর্তনে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন ২০১১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সনদপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে যারা ইতোমধ্যে তাদের মূল সনদ সংগ্রহ করেছেন, তারাও এই সমাবর্তনে অংশ নিতে পারবেন। তাদের জন্য আবেদনের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ থেকে ৭ এপ্রিল ২০২৫ পর্যন্ত। সমাবর্তনে অংশগ্রহণের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ২,৫০০ টাকা, যার মধ্যে গাউন ও ক্যাপ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

এই সমাবর্তনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসের উপস্থিতি। তিনি চবির অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এবং গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা। তার অসামান্য অবদানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে ডি.লিট উপাধিতে ভূষিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ড. ইউনুসের এই সম্মাননা প্রাপ্তি সমাবর্তনকে একটি ঐতিহাসিক মর্যাদা দেবে।

সমাবর্তন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১১টি উপ-কমিটি ও একটি কোর-কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটিগুলো সমাবর্তনের সকল প্রস্তুতি, ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতারের নেতৃত্বে সমাবর্তনের সকল প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে।

দীর্ঘ ৯ বছর পর সমাবর্তন আয়োজনের সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থী ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের আনন্দ ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে যারা আগেই সনদ সংগ্রহ করেছেন, তারাও এবার সমাবর্তনে অংশ নিতে পারবেন বলে খুবই খুশি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ সমাবর্তন (৪র্থ) অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৬ সালে। সেবারের সমাবর্তনে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ উপস্থিত ছিলেন। এবারের সমাবর্তন হবে ২০০৭-০৮ থেকে ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থীদের জন্য। এটি চবির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সমাবর্তন হিসেবে রেকর্ড সৃষ্টি করতে পারে।

ড. মুহাম্মদ ইউনুস ১৯৪০ সালে চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চট্টগ্রাম কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেন। পরবর্তীতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসার ধারণা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেন। তার এই অবদানের জন্য তিনি ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও তিনি প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম (যুক্তরাষ্ট্র), কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল সহ অসংখ্য আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ম সমাবর্তন শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি হবে একটি ঐতিহাসিক মিলনমেলা। ড. ইউনুসের মতো বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্বের উপস্থিতি এই আয়োজনকে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ করে তুলবে। সবুজ পাহাড়ে ঘেরা চবি ক্যাম্পাস সেদিন হয়ে উঠবে উৎসবের মাঠ। সকল প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য এই সমাবর্তন হবে একটি আনন্দ মিলিয়ন মেলা।

Share With Your Friends

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *