চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে ২০ মাসে প্রাণ গেল ৩০ জনের

নতুন করে নির্মিত দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরুর পর তা অল্প সময়েই যাত্রীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু এই রেলপথের নিরাপত্তার ঘাটতি এখন এক গুরুতর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে লেভেল ক্রসিংগুলোতে গেট ও গেটম্যানের অভাবের কারণে বাড়ছে দুর্ঘটনা এবং প্রাণহানির সংখ্যা।

রেলওয়ে পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, গত ২০ মাসে এই রেলপথে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছেন ৩০ জন। গত বছর প্রাণ হারান ১৭ জন এবং চলতি বছর ২ আগস্ট পর্যন্ত মারা গেছেন আরও ১৩ জন। এসব মৃত্যুর বেশির ভাগই ঘটে লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় বা রেললাইন পার হতে গিয়ে।

সবচেয়ে সাম্প্রতিক দুর্ঘটনাটি ঘটে গত শনিবার, রামুর রশিদনগর এলাকায়। একটি অনুমোদিত কিন্তু অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশায় থাকা এক পরিবারের তিনজনসহ চারজন নিহত হন। ঘটনাস্থলে কোনো গেটম্যান ছিল না, ফলে রেলপথটি পার হওয়ার সময় সতর্কতার ঘাটতিই এ দুর্ঘটনার মূল কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে।

চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০৩ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথে মোট ৭২টি লেভেল ক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১৬টিতে রয়েছে গেট ও গেটম্যান। বাকী ৫৬টি ক্রসিং একেবারেই অরক্ষিত। বিশেষ করে ইসলামাবাদ-রামু সেকশনে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি রয়েছে—১৭টি লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে মাত্র একটিতে রয়েছে গেটম্যান।

গত বছরের ৯ নভেম্বর এবং চলতি বছরের ৭ এপ্রিলও এই রেলপথের বিভিন্ন স্থানে অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন আরও কয়েকজন। এসব ঘটনায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী বহুবার গেট স্থাপন ও গেটম্যান নিয়োগের দাবি জানালেও বাস্তবে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ হয়নি। সর্বশেষ রোববার স্থানীয় বাসিন্দারা চিঠি দিয়েছেন বিভাগীয় রেল ব্যবস্থাপককে।

ডুলাহাজারা-ইসলামাবাদ, চকরিয়া-ডুলাহাজারা, সাতকানিয়া-লোহাগাড়া, লোহাগাড়া-হারবাংসহ বিভিন্ন সেকশনের অনেক লেভেল ক্রসিংয়ে গেটম্যান নেই। এর ফলে প্রতিনিয়তই তৈরি হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি।

চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক মাহমুদ ওমর ইমাম বলেন, “যেসব লেভেল ক্রসিং ব্যস্ত এবং যানবাহনের চলাচল বেশি, সেগুলোতে প্রতিবন্ধকতা এবং সার্বক্ষণিক গেটম্যান রাখা বাধ্যতামূলক। বাঁক যুক্ত সড়ক থাকলে সতর্কতা আরও বাড়াতে হবে।”

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক ও দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্পের পরিচালক মো. সবুক্তগীন বলেন, “সব লেভেল ক্রসিং অনুমোদিত হলেও লোকবলের সীমাবদ্ধতায় কিছু স্থানে গেটম্যান দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে প্রতিটি গেটের আগে সতর্কতা ফলক দেওয়া হয়েছে এবং রেললাইন নিরাপদ করতে ৪৬টি আন্ডারপাস নির্মাণ করা হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেসব জায়গায় প্রকৌশল বিভাগ জরিপ করবে। প্রয়োজন অনুযায়ী গেট ও গেটম্যানের অনুমোদনের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে।”

জনগণের সচেতনতা এবং রেলওয়ের কার্যকর পদক্ষেপ না থাকলে, এই গুরুত্বপূর্ণ রেলপথে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

Share With Your Friends

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *