বিশ্বখ্যাত অ্যানিমেশন স্টুডিও স্টুডিও গিবলি, যা মায়াজাল, রহস্য, এবং মানবিক অনুভূতির অসাধারণ সংমিশ্রণে অ্যানিমেশন তৈরি করে, এবার এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে নতুন এক শিল্পকর্মের দিগন্ত উন্মোচন করেছে। গিবলি অ্যানিমেশনকে স্মার্টফোনের পর্দায় জীবন্ত করতে এবার তারা এআই ছবি এডিটিংয়ের মাধ্যমে এক বিপ্লব ঘটাতে যাচ্ছে। এআই প্রযুক্তি নিয়ে গিবলির অভিজ্ঞতা এবং তা কীভাবে তাদের চিরকালীন শিল্পকর্মকে আরও সমৃদ্ধ করবে, তা নিয়ে গড়ে উঠছে নতুন একটি উদ্দীপনা।
গিবলি স্টুডিও এর শুরু থেকেই চমৎকার চিত্রকলা এবং অনুভূতিপ্রবণ গল্পের জন্য পরিচিত। তাদের অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র যেমন স্পিরিটেড অ্যাওয়ে, মাই নেবার টোটোরো, এবং প্রিন্সেস মনোকে বিশ্বব্যাপী অগণিত ভক্তের হৃদয় জয় করেছে। কিন্তু নতুন প্রযুক্তির যুগে, গিবলি সৃষ্টির ধারাকে একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এবার এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করছে।
এআই প্রযুক্তির সাহায্যে গিবলি স্টুডিও তাদের অ্যানিমেশন ছবি ও শিল্পকর্মকে সম্পাদনা এবং পুনর্নির্মাণ করতে পারবে, যা দর্শকদের জন্য আরও আকর্ষণীয় এবং প্রাণবন্ত হবে। উদাহরণস্বরূপ, তারা পুরনো অ্যানিমেশন দৃশ্যগুলোকে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে নতুনভাবে এডিট করতে সক্ষম হবে, যা পুরনো ফিল্মের ঐতিহ্য এবং নতুন প্রযুক্তির মিশ্রণ ঘটাবে।
এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে গিবলি তাদের ছবির স্টাইল, রঙ এবং চরিত্রের গভীরতা পরিবর্তন করতে পারে, যা ঐতিহ্যবাহী অ্যানিমেশন পদ্ধতির চেয়ে অনেক বেশি দ্রুত এবং কার্যকর। গিবলি অ্যানিমেশনগুলোর এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো তাদের চরিত্রগুলোর মুখাবয়ব, যা দেখে দর্শকরা সহজেই অনুভব করতে পারেন চরিত্রের আবেগ। এআই-এর সাহায্যে, চরিত্রের চোখের আন্দোলন, মুখাবয়বের পরিবর্তন এবং মঞ্চস্থ আবেগগুলোর সূক্ষ্মতা আরও উন্নত করা সম্ভব। এছাড়া, গিবলি অ্যানিমেশনগুলোর পরিচিত এক বিশেষ স্টাইল—যেমন সলিড রঙ, নরম প্রক্ষেপণ, এবং সূক্ষ্ম শেডিং—এসব কিছু পুনরায় আঁকার জন্য এআই সফটওয়্যার ব্যবহার করতে সক্ষম।
এআই দ্বারা পরিচালিত ছবি এডিটিং, শুধু গিবলির পুরনো চলচ্চিত্রগুলোকেই আধুনিক করে তুলবে না, বরং আগামী দিনে তাদের নতুন কাজেও নতুন একটি দিগন্ত খুলে দেবে। স্টুডিও গিবলি তাদের সিনেমা এবং অন্যান্য কাজের জন্য এআই-এর মাধ্যমে আরো গভীরতা এবং বিস্তারিত রূপরেখা তৈরি করতে সক্ষম হবে, যা আরও বাস্তবসম্মত এবং মনোমুগ্ধকর হবে। এখন, দর্শকরা আরও বেশি ইন্টারেকটিভ অভিজ্ঞতা পেতে পারে, যেখানে গিবলির জাদুকরী পৃথিবীকে এআই-এর মাধ্যমে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যাবে।
এআই প্রযুক্তি ব্যবহারের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এর নৈতিকতা। গিবলি স্টুডিও জানিয়ে দিয়েছে, তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করার সময় তাদের ঐতিহ্য ও সৃজনশীলতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে। তাদের কাজের মধ্যে কখনও কোনও ধরনের স্বাভাবিক মানবিক স্পর্শের অভাব হবে না, বরং এটি প্রযুক্তির সহায়তায় আরও প্রাণবন্ত এবং বৈচিত্র্যময় হবে। গিবলি অবশ্যই সুনির্দিষ্ট নীতির আওতায় প্রযুক্তি ব্যবহার করবে, যাতে তা শিল্পী ও দর্শকের জন্য একধরনের সমৃদ্ধ ও মানবিক অভিজ্ঞতা হতে পারে।
এআই প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে গিবলি শিল্পীদের সৃজনশীলতা আরও বড় আঙ্গিকে প্রকাশিত হতে পারে। তারা এআই-এর সাহায্যে নতুন ধরনের ছবি তৈরি করতে সক্ষম হবে যা আগে কল্পনাও করা যায়নি। এআইকে কেবল এক ধরনের সরঞ্জাম হিসেবে নয়, বরং একটি সহকর্মী হিসেবে দেখছে গিবলি, যা শিল্পীকে নতুন ধারণা এবং অনুপ্রেরণা দেওয়ার কাজ করবে।
এছাড়া, গিবলি ধারণা করছে যে, ভবিষ্যতে এআই এবং মানুষের সম্মিলিত সৃজনশীলতা এক নতুন শৈল্পিক ভাষা সৃষ্টি করবে, যা আরও মানবিক, আবেগপূর্ণ এবং অর্থপূর্ণ হবে। প্রযুক্তির এ বিবর্তনে, একদিকে যেমন গিবলি তাদের স্টাইল এবং ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, তেমনি অন্যদিকে দর্শকদের কাছে পৌঁছানোর জন্য নতুন কিছু পথ উন্মুক্ত হবে।
স্টুডিও গিবলি, একটি প্রতিষ্ঠান যা দীর্ঘ সময় ধরে বিশ্ব অ্যানিমেশনের শীর্ষে অবস্থান করছে, তাদের নতুন পদক্ষেপ এআই ছবি এডিটিংয়ের মাধ্যমে শিল্পের নতুন এক দিগন্ত খুলে দিচ্ছে। এই প্রযুক্তি শুধু গিবলির অ্যানিমেশন শিল্পকেই সমৃদ্ধ করবে না, বরং শিল্পের সামগ্রিক পৃথিবীকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। আর এটাই প্রমাণ করে, প্রযুক্তির বিকাশ মানবিক সৃজনশীলতার উপর কখনোই আঘাত হানবে না, বরং তাকে নতুন একটি রূপে উপস্থাপন করবে।
মোঃ রাফিকুল ইসলাম
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি