গাজার একাংশ দখলের হুমকি নেতানিয়াহুর

ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাৎজের সুরেই সুর মেলালেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও। এবার গাজার একাংশ দখলের হুমকি দিলেন তিনি। বুধবার ইসরাইলি পার্লামেন্টে বক্তৃতাকালে নেতানিয়াহু এ কথা বলেছেন। 

ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হামাস যত বেশি আমাদের জিম্মিদের মুক্তি দিতে অস্বীকৃতি জানাবে, আমরা তত শক্তিশালী দমন-পীড়ন চালাব। এতে অঞ্চল দখল করা এবং এতে অন্যান্য বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত থাকবে’।

গাজায় এখনো ৫৯ জন বন্দি রয়েছে। যাদের মধ্যে ২৫ জন এখনো জীবিত রয়েছে বলে বিশ্বাস ইসরাইলের। জানুয়ারিতে ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে হওয়া যুদ্ধবিরতি কাঠামোর দ্বিতীয় পর্যায়ে সব জীবিত বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে বলে আশা করা হয়েছিল। 

কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ের চুক্তি ছাড়াই প্রথম ধাপের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ইসরাইল গাজায় তাদের আক্রমণ পুনরায় শুরু করে। তবে নেতানিয়াহুর হুমকির পর পালটা জবাব দিয়েছে হামাসও। 

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠনটি বলছে, ইসরাইল যদি বন্দিদের উদ্ধারের জন্য ‘বল প্রয়োগ করে’, তাহলে তাদের ‘কফিনে’ ফিরিয়ে দেওয়া হবে। 

এছাড়াও হামাসের দাবি, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করা এবং পুনরায় যুদ্ধ করা নেতানিয়াহুর একটি ‘পূর্বপরিকল্পিত ‍সিদ্ধান্ত’ ছিল। 

বিবৃতিতে তারা আরও জানায়, চুক্তির ব্যর্থতার জন্য সম্পূর্ণ দায় নেতানিয়াহুর। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং মধ্যস্থতাকারীদের অবশ্যই তাকে আগ্রাসন বন্ধ করতে এবং আলোচনার পথে ফিরে আসার জন্য চাপ দিতে হবে। 

এদিকে গাজার ভেতরে বাড়ছে হামাসের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ। বুধবার গাজা উপত্যকার উত্তরে শত শত ফিলিস্তিনি বিক্ষোভ করে হামাসের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছেন। 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, বিক্ষোভকারীরা ‘যুদ্ধ বন্ধ করো’ ও ‘হামাস বেরিয়ে যাও’ বলে স্লোগান দিচ্ছেন। 

গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার পর থেকে চলমান যুদ্ধের বিরুদ্ধে এটি একটি বিরল প্রকাশ্য প্রতিবাদ। গাজার উত্তরের বিধ্বস্ত এলাকা বেইত লাহিয়ায় ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দিয়ে বিক্ষোভকারীদের মিছিল চলার দৃশ্য ভাইরাল হয়েছে। 

এক ভিডিওতে দেখা গেছে, লোকজন ধুলো-ধূসর রাস্তায় দাঁড়িয়ে ‘হামাস, চলে যাও’ বলে চিত্কার করছেন। 

এক প্রত্যক্ষদর্শী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এটি যুদ্ধবিরতির দাবিতে স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ। মানুষ ক্লান্ত, তাদের যাওয়ার জায়গা নেই। অনেকে হামাসের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছিলেন। সবাই না হলেও অনেকেই বলছিলেন, হামাস, চলে যাও। মানুষ অতিষ্ঠ, তাদের দোষ দেওয়া যায় না’। 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত আরেক ভিডিওতে দেখা গেছে, বিক্ষোভকারীরা ‘আমরা যুদ্ধ চাই না’ স্লোগান দিচ্ছেন। এক ব্যানারে লেখা ছিল, ‘যুদ্ধ যথষ্টে হয়েছে’। 

এ বিষয়ে হামাসের ঊর্ধ্বতন নেতা বাসেম নাইম বলেন, যুদ্ধের দুর্ভোগের বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিবাদ করার অধিকার আছে। তবে আমরা সন্দেহ করি, কিছু সন্দেহজনক রাজনৈতিক এজেন্ডা এই পরিস্থিতি কাজে লাগানোর চষ্টো করছে। 

উল্লেখ্য, ২০০৭ সাল থেকে গাজায় হামাস এককভাবে শাসন করে আসছে। ওই বছর নির্বাচনে ফাতাহকে হারিয়ে তারা এককভাবে গাজার নিয়ন্ত্রণ নেয়। সেখানে ফাতাহর রাজনীতিও অনেকটা শেষ হয়ে যায়। গাজায় নৃশংস ইসরাইলি হামলা শুরুর পর হামাসের বিরুদ্ধে সমালোচনা বাড়তে থাকে। রাজপথ ও অনলাইনে সেই সমালোচনা চলছে। তবে এখনো গাজায় হামাসের পক্ষে প্রচুর সমর্থন রয়েছে। 

এদিকে গাজায় গত ১৮ মার্চ থেকে ইসরাইলি হামলা এখনো চলমান। গত ২৪ ঘণ্টায় অবরুদ্ধ অঞ্চলটিতে ৩৮ জন নিহত হয়েছে। ফলে নতুন হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৮৩০ জনে। 

অন্যদিকে জাতিসংঘ মঙ্গলবার বলছে, ইসরাইল পুনরায় আক্রমণ শুরু করার পর থেকে গাজা উপত্যকায় কমপক্ষে ১,২৪,০০০ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এছাড়াও জাতিসংঘও অবরুদ্ধ উপত্যকা অবরোধের নিন্দা জানিয়েছে। 

তারা বলেছে, যদি সরবরাহের অনুমতি না দেওয়া হয়, তাহলে দশ মিলিয়ন ফিলিস্তিনি খাবারের পার্সেল ছাড়াই থাকবে। এর ফলে চলমান অবরোধ মানবিক সংকটকে আরও খারাপের দিকে যাবে। 

Share With Your Friends

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *