ইউএসএআইডির আনুষ্ঠানিক বন্ধে বিশ্বব্যাপী ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষের প্রাণহানির শঙ্কা

যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা ইউএসএআইডি ৬৪ বছরের দীর্ঘ পথচলার পর আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ হয়ে গেল। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন গতকাল মঙ্গলবার এ ঘোষণা দেন। এর মধ্য দিয়ে পুরোনো ‘চ্যারিটি-নির্ভর মডেল’-এর অবসান ঘটানোর কথা জানিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। তবে এ সিদ্ধান্তের ফলে লাখো মানুষের জীবন হুমকির মুখে পড়বে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে।

১৯৬১ সালে শীতল যুদ্ধ চলাকালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির উদ্যোগে গঠিত হয়েছিল ইউএসএআইডি। ট্রাম্প প্রশাসন সম্প্রতি সংস্থাটিকে পররাষ্ট্র দপ্তরের অধীনে আনে। এরপর দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এর ৮৫ শতাংশ কার্যক্রম বন্ধ করে দেন।

গত সোমবার ইউএসএআইডির বিদায়ী কর্মীদের উদ্দেশে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ও বারাক ওবামা ভিডিও বার্তা দেন। বুশ বলেন, ‘আমার শাসনামলের অন্যতম সেরা উদ্যোগ ছিল এইডস মোকাবিলা-সংক্রান্ত পিইপিএফএআর প্রকল্প। এটি সারা বিশ্বে প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ মানুষের জীবন বাঁচিয়েছিল।’

ওবামা বলেন, ‘ইউএসএআইডি বন্ধ করা অবিশ্বাস্য রকমের ভুল। নৈতিক দৃষ্টিকোণ ও কৌশলগত দিক—উভয় বিবেচনা থেকে এটি বিপর্যয়কর সিদ্ধান্ত।’

কিন্তু ইউএসএআইডি বন্ধের আনুষ্ঠানিক ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও। তিনি সংস্থাটিকে ‘নগদে এনজিও ব্যবসার প্ল্যাটফর্ম’ মন্তব্য করে বলেন, ‘সহায়তার ওপর নির্ভরতা উন্নয়নশীল দেশের নেতাদের জন্য একধরনের নেশায় পরিণত হয়েছিল।’ বাণিজ্য ও কূটনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধিকে উন্নয়নের কার্যকর উপায় বলে মনে করেন তিনি।

চিকিৎসাবিষয়ক সাময়িকী দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত এক গবেষণায় আশঙ্কা করা হয়, ইউএসএআইডির সহায়তা বন্ধ হওয়ায় ২০৩০ সালের মধ্যে অন্তত ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে, যাদের এক-তৃতীয়াংশ শিশু।

কিন্তু মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দাবি করেন, ‘এ গবেষণায় ভুল অনুমান রয়েছে।’ তিনি জানান, এইডস মোকাবিলায় মার্কিন প্রেসিডেন্টের জরুরি কর্মসূচি (পিইপিএফএআর) অব্যাহত থাকবে। তবে সংক্রমণপূর্ব প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা (পিআরইপি) দেওয়া বন্ধ করবে, যা এইচআইভি বা এইডস সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিরা সংক্রমণের আগেই গ্রহণ করেন, যাতে ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করলেও তা সংক্রমণ না ঘটাতে পারে। এটি এইচআইভি সংক্রমণ প্রতিরোধে ৯৯ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকর।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ইউএসএআইডির কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ হলেও ভিন্ন উপায়ে গাজার জন্য খাদ্যসহায়তা চালানো হবে। বর্তমানে তা সামরিক কন্ট্রাক্টরের মাধ্যমে সরবরাহ করা হচ্ছে, ইসরায়েলের সেনারা যার নিরাপত্তায় রয়েছেন। তবে প্রত্যক্ষদর্শী, জাতিসংঘ ও গাজা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, এই সহায়তা নিতে গিয়ে ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে কয়েক শ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির জরুরি বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট বব কিচেন বলেন, ইউএসএআইডি বন্ধ হওয়ার কারণে শুধু সুদানের চার লাখ শরণার্থী জরুরি সহায়তা হারিয়েছে। আফগানিস্তানে পাঁচ লাখ নারী-শিশুর শিক্ষাও থমকে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ইউরোপের দেশগুলোও সহায়তা কমিয়ে প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়াচ্ছে।

কিচেনের হুঁশিয়ারি, ‘এটা শুধু নৈতিক নয়, নিরাপত্তার বিষয়ও। সহিংসতা ও রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়লে এর প্রতিরোধে কিন্তু আর কোনো প্রাচীর থাকবে না।’

Share With Your Friends

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *