আজকে “হযরত ফাতেমাতুজ জোহরা (রা.)” এর ওফাত দিবস-“জান্নাতের রমণীদের সর্দারীনি ফাতিমাতুজ জোহরা (রাঃ)- তোমপর লাখো সালাম”

আজ ৩ রমযান নবী (ﷺ) নন্দিনী হযরত সাইয়েদা ফাতেমাতুজ জোহরা (রা.) এর ওফাত দিবস। তিনি ছিলেন অধিক দানশীলা রমনীগণের মধ্যে অন্যতম। এ মহান দিনে ওনার দানশীলতার একটি দৃষ্টান্ত পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল।

সাইয়েদা ফাতেমাতুজ জোহরা (রা.) ছিলেন রাসূল করীম (ﷺ)- এর চতুর্থ এবং সর্বকনিষ্ঠ কন্যা। শৈশবকাল থেকেই তিনি ছিলেন অত্যন্ত গভীর ও আত্ম প্রকাশ ও প্রদর্শনীতে ছিল তাঁর প্রচুর- অনীহা। একবার খাদিজাতুল কোবরা তাঁর এক আত্মীয়ের বিবাহ অনুষ্ঠানে যাবার জন্য ফাতেমার জন্য ভাল কাপড় ও গহনা বানালেন। বিয়েতে যোগদানের জন্য যখন বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় হলো তখন হযরত ফাতেমা (রাঃ) এসব কাপড় ও গহনা পরতে অস্বীকার করলেন এবং সাদাসিধেভাবেই বিয়ের মাহফিলে অংশ নিলেন।
মদীনায় হিজরতের সময় সাইয়েদা ফাতেমাতু জোহরা (রা.) বয়োপ্রাপ্তা হলেন। হুজুর (ﷺ) তার বিবাহ হযরত আলী (রা.)-এর সঙ্গে স্থাপন করলেন। হুজুর (ﷺ) বিয়ের খুতবা পাঠ করলেন এবং মুচকি হেসে আলী মুরতাজাকে বললেন, “আমি চারশ’ মিসকাল রৌপ্য মোহরের বিনিময়ে ফাতেমাকে তোমার নঙ্গে বিবাহ দিলাম। তুমি কি তা কবুল করেছে? হযরত আলী (রা.) বললেন, “জ্বী, কবুল করলাম।” অতঃপর হুজুর (ﷺ) দোয়া করলেন। সকলেই দোয়ায় শরীক হলেন। হযরত ফাতেমা (রাঃ) ও আলী (রাঃ) এর সংসার ছিল অত্যন্ত গরিবী হালের। একবার রাসূল (ﷺ) হযরত ফাতেমাতুজ জোহরার ঘরে গিয়ে দেখলেন যে, স্নেহের কন্যা উটের চামড়ার পোশাক পরে আছেন এবং তাতেও ১৩টি পট্টি মারা। তিনি আটা পিষছেন এবং মুখ দিয়ে আল্লাহর কালাম উচ্চারণ করছেন।
এত গরিবী হালে থাকার পরেও তিনি যথাসাধ্য আল্লাহর রাহে দানে পিছিয়ে ছিলেন না। একবার সালমান ফারসী একবৃদ্ধ আরাবীকে সঙ্গে নিয়ে হযরত ফাতেমাতুজ জোহরার বাড়িতে গিয়ে দরজায় কড়া নাড়লেন এবং বললেন, হে আল্লাহর সত্য রাসুল (ﷺ) কন্যা! এই মিসকিনের খাবারের বন্দোবস্ত করুন।”
হযরত ফাতেমা (রা.) বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বললেন, “হে সালমান! খোদার কসম! আজ আমরা তৃতীয় দিনের মতো অভুক্ত রয়েছি। শিশু দুটি অভুক্ত অবস্থায় শুয়ে আছে। কিন্তু সায়েলকে খালিহাতে ফিরে যেতে দেব না। আমার এই চাদর শামউন ইহুদীর কাছে নিয়ে যাও এবং বলো ফাতেমা (রা.) বিনতে মুহাম্মদের (দ.) এই চাদর রেখে গরীব মানুষটিকে কিছু দাও।” সালমান (রা.) ইহুদীর নিকট গেলেন এবং সব কিছু খুলে বললেন। সব শুনে ইহুদী সালমানকে বললেন, “তুমি সাক্ষী থাক যে, আমি ফাতেমার (রা.) পিতা(ﷺ) এঁর উপর ঈমান এনেছি।”এর পর কিছু খাদ্য হযরত সালমান (রা.) কে দিলেন এবং চাদর খানাও সাইয়েদা ফাতেমাকে ফেরত পাঠিয়ে দিলেন। তিনি তা নিয়ে তাঁর নিকট পৌঁছলেন। সাইয়েদা ফাতেমা (রা.) স্বহস্তে তাড়াতাড়ি আরাবীর জন্য রুটি বানায়ে সালমানকে দিলেন। তিনি বললেন, “এ থেকে বাচ্চাদের জন্য কিছু রেখে দিন।” হযরত ফাতেমা (রা.) জওয়াব দিলেন, “সালমান! যা খোদার রাস্তায় দিয়েছি, তা আমার বাচ্চাদের জন্য জায়েজ নয়।”
হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেছেন, একবার হযরত আলী (রা.) সারা রাত ধরে এক বাগানে সেচ দিলেন এবং পারিশ্রমিক হিসেবে সামান্য যব পেলেন। হযরত ফাতেমা (রা.) তা থেকে এক অংশ নিয়ে আটা পিষলেন এবং খাবার তৈরি করলেন। ঠিক খাবার সময় এক মিসকিন দরজায় কড়া নাড়লো এবং বললো, “আমি ভুখা আছি।” হযরত সাইয়েদা (রা.) সম্পূর্ণ খাবার তাকে দিয়ে দিলেন। অতঃপর অবশিষ্ট আনাজের কিছু অংশ নিয়ে পিষলেন এবং খাবার তৈরি করলেন। খানা তৈরি শেষ হতেই একজন দরজায় এসে হাত পাতলো। তিনি সব খাবার তাকে দিয়ে দিলেন। অতঃপর আবশিষ্ট আনাজ পিষলেন এবং খাবার তৈরি করলেন। ইতিমধ্যে এক জন মুশরিক কয়েদী আল্লাহর রাস্তায় খাবার চাইলো। সেই সকল খাবার তাকে দিয়ে দেয়া হল। ফলে বাড়ির সবাই সেদিন অভুক্ত রইলেন। আল্লাহ পাক তাদের এ দানকে এমন পছন্দ করলেন যে, তাদের সবার জন্য আয়াত নাজিল হলো। “ওয়া ইউত্য়েমুনাত্ তায়ামা আলা হুব্বিহি মিসকিনাওঁ ওয়া ইয়াতিমাও ওয়া আছিরা”-এবং সে আল্লাহর রাস্তায় মিসকিন, এতিম ও কয়েদীকে খাবার খাওয়ায়। এ ভাবে রাসূল দুহিতা হযরত ফাতেমা (রা.) সর্বকালের মহিলাদের জন্য দানের আদর্শ নমুনা রেখে গেলেন।

মোহাম্মদ মোহছেন মোবারক

Share With Your Friends

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *